৯৯৯-এ ফোন : নারীকে থানায় নিয়ে নির্যাতন করলো পুলিশ কর্মকর্তা

৯৯৯ নম্বরে ফোন কলের খেসারত হিসেবে এক নারীকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে খোদ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, ৯৯৯ নম্বরে কল করে সাহায্য চাওয়ায় গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের ধাপেরহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরির্দশক) নওয়াবুর তার ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। এছাড়া ভুক্তভোগী নারী ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লোকজন দিয়ে বাড়ি ভাঙচুর এবং মিথ্যা মামলায় জড়ানো ও পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করার অভিযোগ তুলেছেন।

এসব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতিকার চেয়ে অভিযুক্ত পুলিশ পরির্দশকের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রংপুর পুলিশ রেঞ্জের ডিআইজিকে ও সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) গাইবান্ধা পুলিশ সুপারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন শাম্মি আকতার নামের ভুক্তভোগী নারী।

নির্যাতনের শিকার নারীর অভিযোগ, ১২ সেপ্টেম্বর ভোরে ফাঁড়ির ইনচার্জ নওয়াবুর আমাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। এসময় আমার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ জানতে চাইলে তিনি অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বলেন, ফাঁড়িতে চল তোরে ডিম ঢুকিয়ে বুঝিয়ে দেবো, কেন ধরে নিচ্ছি। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, তুই পুলিশের বিরুদ্ধে ৯৯৯ নম্বরে কল করিস, তোকে ফাঁড়িতে নিয়ে মজা দেখাবো। পরে ফাঁড়িতে নিয়ে নারী গ্রাম পুলিশ সদস্য দিয়ে আমাকে মারধর করান। এসময় নওয়াবুর বলেন, তুই ৯৯৯-এ কল করিস, তুই মাতব্বর হইছিস, তোকে জেলের ভাত খাওয়াবো। আমি বারবার অনুরোধ করলেও তার মন গলেনি। আমি ডিগ্রি পরীক্ষা দেওয়ার কথা বললেও আমাকে ছাড়া হয়নি। পরে ফাঁড়ি থেকে আমাকে সাদুল্যাপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নওয়াবুর আমাদের প্রতিপক্ষ শংকার চন্দ্রকে দিয়ে আমি ও বাবা-মা, বোন ও চাচাকে আসামি বানিয়ে মামলা করান। এসময় ওসি সাহেবকে অনুরোধ করায় পুলিশি প্রহরায় আমি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাই।

নির্যাতনের শিকার ওই নারীর বাবা সাজু প্রামাণিক অভিযোগ করেন, জমি নিয়ে ভাইসহ প্রতিবেশী শংকার চন্দ্রের সঙ্গে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও আছে। তবে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নওয়াবুরের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে প্রতিপক্ষ আমাদের বিভিন্ন সময় হুমকি দিচ্ছে ও বাসাবাড়ি দখলের চেষ্টা করছে। কিছুদিন আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর সকালে প্রতিপক্ষ শংকার চন্দ্র সাহা ও শরিফুল প্রামাণিক গংরা সংঘবদ্ধ হয়ে লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় তারা বাড়িঘর ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। উঠানের বিভিন্ন গাছপালা কেটে ফেলে ও লুটপাট চালায়। একই সঙ্গে বসতি জমি দখলে নিয়ে ইটের দেয়াল নির্মাণ করে। অথচ ফাঁড়ির ইনচার্জ নওয়াবুর প্রতিপক্ষকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করিয়েছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, নওয়াবুর ফাঁড়িতে যোগদানের পর থেকে আটক বাণিজ্য শুরু করেছেন। মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িতদের সঙ্গে তার সখ্যতার অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ধাপেরহাটের একটি বাড়িতে ঢুকে ফাঁড়ির পুলিশ ভিডিও করছিলে। ভিডিও করতে বাড়ির মালিক ব্যবসায়ী ও যুবলীগ নেতা পলাশ বাঁধা দেন। পরে খবর পেয়ে ইনচার্জ নওয়াবুর সেখানে গিয়ে পলাশ ও তার বাবাকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী ও নেতাকর্মীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ফাঁড়িতে গেলে নওয়াবুর তাদের দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠেন। এক পর্যায়ে তিনি ৩-৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছোড়েন।

এ ঘটনার প্রতিবাদ ও নওয়াবুরের অপসারণ দাবিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বিক্ষোভ করেন ব্যবসায়ীসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। পরে খবর পেয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে এখনো এ ঘটনায় চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

তবে অভিযুক্ত পুলিশ পরির্দশক নওয়াবুর তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, মামলার আসামি হিসেবে শাম্মি আকতারকে গ্রেফতার করা হয়। গালিগালাজ ও মারধরের কোনও ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া পুলিশের কাজে বাধা ও গায়ে হাত দেওয়ার অভিযোগে ব্যবসায়ী পলাশের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।

পরিদর্শক নওয়াবুরের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্তের কথা জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, গুরুত্ব সহকারে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ মিললে নওয়াবুরের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন

বার্তাবাজার/ডব্লিওএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর