সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে চলছে জমজমাট জুয়ার আসর

শেখ আমিনুর হোসেন, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার ( স্টেডিয়ামে ) চলছে হাউজির নামে জুয়া। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত সন্ধ্যা থেকে রাতভর চলে এই জুয়া। চার শ’ থেকে পাঁচ শ’ জুয়াড়ি এতে অংশ নিচ্ছে। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা বন্ধের কোন উদ্যোগেই নেয়া হচ্ছে না।

সম্প্রতি শহরের প্রাণকেন্দ্র লাবনী মোড় ফ্রেন্ডস ড্রামাটিক ক্লাব থেকে দিন দুপুরে জুয়া খেলার সময় ২২ জুয়াড়িকে আটক করে র‍্যাব। তাদের প্রত্যককে ১৫ দিন থেকে এক মাস করে কারাদন্ড দেয় ভ্রাম্যমান আদালত। অথচ সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে চলমান জুয়া বন্ধ এখনও কোনা ব্যবস্হা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন ধরেই চলছে এই জুয়া। তারা এই জুয়া খেলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

শহরের পলাশপোল মহল্লায় বসবাসকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জুয়াড়িদের কারণে এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। শহর এলাকায় জুয়াড়িদের বাড়িতে বাড়িতে চলছে অশান্তি। বিশেষ করে জুয়ার টাকা সংগ্রহ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে গোলমাল লেগেই আছে। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক তালা উপজেলার বাসিন্দা একজন জুয়াড়ি বলেন, আমি খেলা বন্ধ করতে চাই। আমার পরিবারের শান্তি শিঁকেয় উঠছে। আমার স্ত্রী আমার ওপর ক্ষীপ্ত হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এমনই নেশা যে তা বন্ধ করতে পারছিনা। আপনারা লেখালেখি করে বন্ধ করতে পারলে আমি ও আমার পরিবার খুশী হবো।

খোঁজ নিয়য় জানা গেছে, ২০,৩০,৫০,১০০,২০০ ও ৫০০ টাকায় হাউজির টিকিট বিক্রি হয়ে থাকে। জুয়া খেলা নির্বিঘ্নে করার জন্য কয়েকজন কর্মচারি নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের নিয়মিত বেতনও দেওয়া হচ্ছে। রাতভর জুয়াড়িদের আপ্যায়ন ও দেখভাল করেন নিয়োগকৃত এসব কর্মচারি।

সাতক্ষীরা শহর সম্প্রীতি বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগীদের ধারনা জুয়ার টাকা যোগাড় করতে এসব চুরি সংঘটিত হয়েছে। জুয়ার কারণে এলাকার শিশু কিশোরদের মনোযোগ লেখাপড়া থেকে বিচ্যুতি হচ্ছে বলেও জানান গ্রামবাসী। বিভিন্ন পরিবারের গৃহবধূরা জানান, তাদের স্বামী বাড়ির গয়নাও চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। দোকান বন্ধক দিচ্ছে। কিছুদিন পর বিক্রি করে দিচ্ছে। এভাবে পরিবারের সম্পদ তো যাচ্ছেই। জুয়াড়িরা স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের প্রতি উদাসীন। সংসারে শান্তি বলে কিছুই থাকছে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিদিন জুয়া থেকে অর্জিত টাকা আয়োজকরা নিজেদের মতো গ্রহন করে অন্যদের ম্যানেজ করার মতো টাকা ছড়িয়ে দেয়। এতে প্রশাসন ও পুলিশের কিছু অসাধু লোকজন আইন শৃংখলা বাহিনীর কোন না কোন সদস্য, মিডিয়াকর্মীরা নগদ টাকায় লাভবান হচ্ছেন। ফলে তারা জুয়া বন্ধ এগিয়ে আসছেন না।

এ বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কেউ কথা বলতে রাজী হননি।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ সভাপতি এড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, জুয়ার কারণে পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। পারিবারিক শান্তি হারিয়ে যাচ্ছে। এলাকায় চুরি ছিনতাই বেড়ে যাচ্ছে। শিশু কিশোরদের লেখাপড়াও বিঘ্নিত হচ্ছে। অবিলম্বে এই অনৈতিক অসামাজিক কাজ বন্ধ হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবো।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর