পঞ্চগড় একই নামে দুটি জন্ম সনদ দিল ইউনিয়ন পরিষদ

পঞ্চগড়ে সুমন রানা (২৩) নামে এক ব্যাক্তিকে আলাদা আলাদা জন্ম তারিখে দুটি জন্ম সনদ প্রদানের ঘটনা ঘটেছে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদে।

এদিকে একই ব্যাক্তিকে দুটি জন্ম সনদ প্রদান করার অপরাধে ওই ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা (ইউডিসি) মিজানুর রহমান মিজান (২৯) কে রেজুলেশন করে বরখাস্তের সুপারিশ পত্র পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহি অফিসার বরাবরে প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহি অফিসারের তদন্তাধীন রয়েছে। জন্মসনদ গ্রহনকারী সুমন রানার (২৩) বাড়ি সদর ইউনিয়নের ০৮ নম্বর ওয়ার্ডের শিংপাড়া গ্রামে। সে ওই গ্রামের জরিপ মোল্লার ছেলে।

পঞ্চগড় সদর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায় প্রথমে ২০১৭ সালে ১৫ অক্টোবর তারিখে সুমন রানার নামে জন্ম সনদ ইস্যু করা হয় সেখানে ওই সনদে তার জন্ম তারিখ ছিল ২০০০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। পরে পুনরায় সুমন রানার নামে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ইং তারিখে নতুন আরও একটি জন্ম সনদ ইস্যু করা হয়। নতুন ওই সনদে তার জন্ম তারিখ দেওয়া হয়েছে ১৯৯৭ ইং সালের ৫ ফেব্রুয়ারী। নতুন জন্ম সনদে ওই ব্যাক্তির বয়স প্রায় তিন বছর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ওই ইউপি”র উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান এর সাথে সাক্ষাত করলে তিনি জানায় আসলে গত ২৯ সেপ্টেম্বর সুমন রানা নামে এক তরুন আমার কাছে জন্ম সনদ নিতে আসে। আমি তাৎক্ষনিক তাকে ইউপি সচিব নয়ন ইসলামের কাছে দেখা করার পরামার্শ দেই। অপর দিকে আমি ওই তরুনের পিতা মাতার নাম ইউপি এর তথ্য কম্পিউটারে অনুসন্ধান করেছি, কিন্তু তার পিতা মাতার নামে কম্পিউটারে কোন তথ্য সংরক্ষিত না পাওয়ায় আমি বিষয়টি সচিবকে জানাই।

পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর সচিব নয়ন ইসলাম আমাকে আবেদনের মাধ্যমে ওই তরুনকে জন্ম সনদ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তারপর ওই দিনই আমি ওই তরুনের জন্ম সনদ এর পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সুমন রানাকে সচিব এর নিকট পাঠিয়েছি। কম্পিউটার এর যাবতিয় তথ্যাদি কম্পিউটারে বের করতে সচিব এর নিজস্ব পাসওয়ার্ড থাকে। সচিব নয়ন আমাকে যেভাবে পরামার্শ দেন সেভাবেই আমি কাজ করি। নতুন এই জন্ম সনদটি আমি তার নির্দেশেই দিয়েছি।

ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নয়ন ইসলাম জানায় সুমন রানার নামে পূর্বের জন্ম নিবন্ধন থাকলে উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান কেন নতুন আরও একটি জন্ম সনদ প্রদান করবে? নতুন জন্ম সনদটি প্রদানে আমার কোন ভুমিকা নেই। কারণ প্রিন্ট কপি যখন আমার কাছে আসে আমি ৫০ টাকা ফিস গ্রহন করে সই করে দেই। পরবর্তিতে চেয়ারম্যান সাক্ষর করে জন্ম সনদ প্রদান করে থাকে। উদ্যোক্তা আমার কথার কোন কর্নপাত না করে নতুন আরও একটি জন্ম সনদ কেন দিয়েছে এটা আমার জানা নেই।

এদিকে সুমন রানার সাথে তার বাড়িতে দেখা হলে তিনি জানায় আসলে জন্ম সনদ দুটি আমাকে ইউনিয়ন পরিষদ হতে দেওয়া হয়েছে। আমি সৌদি আরবে যাওয়ার ব্যাপারে এজেন্সিতে আলাপ আলোচনা চলছে এজন্যই নতুন একটি জন্ম সনদ প্রয়োজন। সেজন্য আমি আমার পিতাকে ইউনিয়ন পরিষদ হতে নতুন একটি জন্ম সনদ নেওয়ার কথা বলেছি। কিন্তু তিন বছর বাড়িয়ে কেন জন্ম সনদ দিয়েছে তা আমার জানা নেই। দুটি জন্ম সনদ আমার নামে হওয়ায় আমার পাসপোর্ট এর জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন আটকে গেছে।

পঞ্চগড় সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল হক জানায় আসলে সচিব যখন একটি জন্ম সনদে সই করে তখন আমি জন্ম সনদে সই প্রদান করি। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা মিজানের ভুলের কারনে দুটি জন্ম সনদ একই ব্যাক্তির নামে হয়েছে। এজন্যই আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ গত ১২ অক্টোবর রেজুলেশন করে উদ্যোক্তা মিজানুরকে বরখাস্তের সুপারিশ পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহি অফিসারকে প্রদান করেছে। উপজেলা নির্বাহি অফিসার এ ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।

পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা আরিফ হোসেন জানায়, আসলে ওই ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা(ইউডিসি) মিজানুর রহামানের বরখাস্তের ব্যাপারে একটি রেজুলেশন পেয়েছি, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

কেএস/বার্তাবাজার

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর