সঞ্চয় করা মুষ্টির চালে স্বনির্ভর হরিপুরের ২ হাজার অতি দরিদ্র পরিবার

সংগ্রহ করা সাপ্তাহিক মুষ্ঠির চাল সঞ্চয় এবং তা পুঁজি হিসেবে কাজে লাগিয়ে স্বনির্ভরতার পথ খুজে পেয়েছে হরিপুরের ২ হাজার অতি দরিদ্র পরিবার।

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় “ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ” নামে একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার সহায়তায় ও হাতে-কলমে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দলগতভাবে এসব মুষ্ঠির চাল সঞ্চয় করে স্বনির্ভর হতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে এসব পরিবারের নারীরা।

ছবি: বার্তা বাজার

“ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ” এর সহায়তায় প্রত্যেক গ্রামের অশিক্ষিত নারী সদস্যরা তাদের মুষ্ঠির চাল থেকে প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল স্ব-নির্ভর দলের ফান্ডে জমা করেন। চাল সংরক্ষনের জন্য প্রতিটি দলে রয়েছে একটি ড্রাম। কোন সদস্যের ঘরে যখন খাবারের চাল থাকে না, তখন দলের ফান্ডে রাখা চাল থেকে ধার করে নিয়ে যায় এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তা ফেরত দেন। ফান্ডে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল জমা রেখে অবশিষ্ট চাল বিক্রি করে সেই অর্র্থ দলের ব্যাংক একাউন্টে জমা রাখেন এবং সাপ্তাহিক প্রতি সদস্য ২০-৫০ টাকা হারে সঞ্চয় জমা করেন। তাদের জমানো অর্র্থ থেকে সুদ বিহীন ঋণ নিয়ে সদস্যরা হাঁস-মুরগী ও গরু ছাগল পালন, সন্তানদের লেখা-পড়ার খরচ, স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিন স্থাপন, চাষাবাদ করে থাকেন । স্ব-নির্ভর দলের সদস্যরা সংস্থার দেয়া (অফেরতযোগ্য) ৫,৫০০/ টাকা দলে রিভলভিং হিসেবে জমা করে ৮,০০০/- থেকে ১২,০০০/ টাকা পর্যন্ত সুদ বিহীন ঋণ গ্রহণ করে উৎপানশীল সম্পদ ক্রয় করছেন। এতে প্রতিটি পরিবারে দুই-তিন ধরনের উৎপাদনশীল সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পরিবারের আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

হরিপুরের ডিপপাড়া স্বনির্ভর দলের সভাপতি রঙ্গিলা বেগম জানান, আমি অল্প-শিক্ষিত হয়েও দলের নেতৃত্ব দিচ্ছি। দলের কোন সদস্যদের সমস্যা দেখা দিলে দলগতভাবে ছুটে গিয়ে তার পাশে দাড়াই, সরকারী বিভিন অফিসের সাথে যোগাযোগ করে সদস্যসের মাঝে ভিজিডি কার্ড, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা করে দিতে সক্ষম হয়েছি। আগে আমি মানুষের বাড়ীতে ঝি’য়ের কাজ করতাম। আমি এই স্ব-নির্ভর দল করে ১ লক্ষ টাকায় ১ বিঘা জমি বন্ধক নিয়েছি। এখন আমার ৪টি গরু, ১টি ছাগল ও ১০টি মুরগী রয়েছে এবং আমার স্বামীকে কাঁচামালের ব্যবসায় পুজি করে দিয়েছি, আমি এখন স্বপ্ন দেখি আমার বাড়ীতে একটি গরুর খামার প্রতিষ্ঠা করার।

ছবি: বার্তা বাজার

প্রকল্প সমন্বয়কারী জনাব মনির হোসেন বলেন “ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ” একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা । ফোরাম সিড – সুইডেন এর আর্থিক সহায়তায় সংস্থাটি ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার দুইটি ইউনিয়ন- এ (ডাঙ্গীপাড়া ও বকুয়া) ২০০০ অতি-দরিদ্র ও দরিদ্র পরিবারের মাঝে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জেন্ডার বৈষম্য হ্রাসের লক্ষ্যে তিন বছর মেয়াদি চৎড়সড়ঃরহম ডড়সবহ ঊসঢ়ড়বিৎসবহঃ জরমযঃং ধহফ ঊপড়হড়সরপ উবাবষড়ঢ়সবহঃ (চড়ডঊজঊউ) নামক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মোঃ আব্দুল করিম বলেন- “ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ” প্রকল্পের প্রতিটি কার্যক্রম সরকারী সকল দপ্তরের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে অত্যান্ত স্বচ্ছতার সাথে বাস্তবায়ন করছে। আমি সরেজমিনে তাদের স্ব-নির্ভর দল, সদস্যের বাড়ী পরিদর্শন করেছি। তাদের এই স্ব-নির্ভর কার্যক্রম আমার কাছে খুব ভাল লেগেছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব মোঃ জিয়াউল হাসান মুকুল বলেন- এই সংস্থাটির কার্যক্রম অত্যন্ত সুন্দর যা অন্যান্য সংস্থার চেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী। হরিপুর উপজেলাবাসীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ এর ভূমিকা প্রশংসনীয়।

বার্তা বাজার/এম.সি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর