একটি দাফন শেষ না হতেই আরেক জনের মৃত্যু, এক মাসে মৃত্যু ৪৪

তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে গ্রামের কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দেখা মেলে একই সারিতে ২৪ জন মানুষের কবর। বাঁশের রেলিং দিয়ে চতুর্দিক ঘেরা কবরে চির সমাহিত গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বয়সী মানুষ। প্রতিনিয়ত ভোরের দিকে মসজিদের মাইকে ভেসে আসা মৃত্যুর খবর গ্রামের মানুষের কানে যেন নৈমিত্তিক বেজেই যাচ্ছে। এক জনের মরদেহ দাফন সম্পন্ন করে বাড়ি ফেরার আগেই আরেকজনের মৃত্যুর খবর!

গ্রামের ইতিহাসে এতো মানুষের মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম। তাই ভীতি ছড়িয়েছে সকলের মনে। তবুও করোনা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ থাকা মানুষের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না। বিভিন্ন ধরনের গুজব, ভয়-ভীতি আর অনিহায় করোনা পরীক্ষা থেকে দূরে সরে আছেন গ্রামের অনেক মানুষ। এতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানালেন কয়েকজন সচেতন মানুষ।

এ চিত্র মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া গ্রামের। একই উপজেলার গাড়াডোব গ্রামে গেল এক মাসে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। জেলার অনেকে গ্রামের চিত্র এমন হলেও করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষের অসচেতনতাকেই দায়ী করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

জানা গেছে, জোড়পুকুরিয়া ও গাড়াডোব গ্রামে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত, বার্ধক্য, দীর্ঘদিনের রোগাক্রান্ত এবং কিছু মানুষের করোনা উপগর্সও ছিল। এছাড়াও বিপুল সংখ্যক মানুষ সর্দি জ্বর ও করোনার অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে করোনা পরীক্ষার আওতার বাইরে রয়েছেন।

জোড়পুকুরিয়া গ্রামের গ্রাম্য ডাক্তার লিটন হোসেন ‘বার্তা বাজার’ কে জানান, প্রতিদিন অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন মানুষ তার কাছে চিকিৎসার জন্য আসেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই রোগীর থাকে করোনা উপসর্গ। জোর করেও এদেরকে করোনা পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেন এই পল্লী চিকিৎসক।

তিনি বলেন, জোড়পুকুরিয়া ও আশেপাশের গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ির মানুষেরই করোনা উপসর্গ আছে। পরীক্ষা করলে এদের মধ্যে ৮০ ভাগের উপরে পজিটিভ হবে।জোড়পুকুরিয়া গ্রাম সুত্রে জানা গেছে, গেল এক মাসে যে ২৪ জন মৃত্যু বরণ করেছেন এদের মধ্যে একজন করোনা আক্রান্ত ছিলেন। বাকিরা কেউ করোনা পরীক্ষা করেননি। পরীক্ষা করা গেলে হয়তো এদের মধ্যে বেশিরভাগ করোনা পজিটিভ পাওয়া যেতো। এতো কিছুর পরেও গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানা ও করোনা পরীক্ষার বিষয়ে নানা অজুহাত দেখিয়ে বিরত থাকছেন।

এদিকে জোড়পুকুরিয়া গ্রামের মতই একই চিত্র গাড়াডোব গ্রামের। গাড়াডোব গ্রামে মৃত্যু বরণকারী ২১ জনের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন ৫ জন। বাকি যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের কারও পরীক্ষা করা হয়নি।

গাড়াডোব গ্রামের কয়েকজন জানান, করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও করোনা পরীক্ষা নিয়ে নানা ধরনের গুজবে ডুবে আছে গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ। ফলে গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ আক্রান্ত হলেও পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না। সর্দি, জ্বর সহ করোনার অন্যান্য উপসর্গ থাকার কেউ যখন অক্সিজেন সংকটে পড়ছেন ঠিক তখন তাকে বাধ্য হয়ে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে যারা বিভিন্ন রোগে ভুগছেন তাদেরকেই কেবল চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিতেই অভ্যস্থ।

করোনা পরীক্ষা ও আক্রান্ত হলে কোন ভীতি নেই উল্লেখ করে মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডাঃ নাসির উদ্দীন ‘বার্তা বাজার’ কে বলেন, ঠাণ্ডা কাশি যাদের হচ্ছে তারা যদি সচেতন হয় তাহলে অনেক নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাদেরকে হাসপাতালে আসতে হবে প্রয়োজনে টেস্ট হতে হবে। তাছাড়া অনেকে তথ্য গোপন করছে বিধায় অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

করোনা চিকিৎসা আছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, পরীক্ষায় যদি কেউ পজিটিভ হন তাহলে তার সু চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা সম্ভব। কিন্তু গোপনে করণা আক্রান্ত হয়ে কোন ব্যক্তির চিকিৎসা নিলে তিনি যেমনি শারীরিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তার পাশাপাশি একই ব্যক্তির মাধ্যমে অন্য মানুষের শরীরেও ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস সর্বশেষ তিনি বলেন, যেসকল মানুষ করোনা উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত রয়েছেন, ভয় ভীতি উপেক্ষা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেওয়ার আহবান জানান।

মাসুদ রানা/বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর