সুন্দরবনে আগুন লাগা ও নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ
বাংলাদেশর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি বলে বন কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন।
তবে আগুনটি পুরোপুরি নিভেছে কিনা, সেটা জানাতে আরও কিছু সময় লাগবে বলে তারা জানিয়েছেন।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে দাসের ভারানী টহল ফাঁড়ির বনে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পেয়ে বন বিভাগ, দমকল বিভাগ ও স্থানীয় মানুষজন আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে।
মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ জয়নাল আবেদিন মঙ্গলবার দুপুরে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, আগুন পুরোপুরি নেভানো না গেলেও এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বন বিভাগ, ফায়ার ও স্থানীয় লোকজন মিলে দেড়শ জনের বেশি মানুষ এখানে কাজ করছে।
তিনি জানান, গতকাল রাতে এবং আজ সকালে খানিকটা বৃষ্টি হওয়ার কারণে আগুন অনেকটাই আয়ত্তে চলে এসেছে। সেই সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের পানির লাইনটাও চালু হয়ে গেছে
সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ জয়নাল আবেদিন জানাচ্ছেন, এক একরের কম জায়গা জুড়ে আগুনটি লেগেছে। সেটি যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য ‘ফায়ার লাইন’ কেটে (আগুনের চারপাশের এলাকায় গাছপালা এবং মাটিতে নালা কেটে) আগুনের জায়গা অন্য জঙ্গল থেকে পৃথক করে দেয়া হয়েছে।
মি. আবেদিন বলছেন, ”আগুন এখন আর দেখা যাচ্ছে না, শুধু ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। মাটির নিচের পাতাগুলো হয়তো পুড়ছে। যেখানে আগুন, সেখানে বড় ধরনের কোন গাছ নেই, ঝোপের জঙ্গল। পুরনো পাতা জমে স্তূপ হয়ে জ্বলছে।”
সোমবার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বাগেরহাটের শরণখোলার সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন লিটন।
তিনি বলছেন, ”ভোলা নদী মরে যাওয়ার কারণে সুন্দরবনের ওই এলাকায় জোয়ার-ভাটার পানি তেমন একটা ওঠে না। সেই কারণে সেখানে বেশিরভাগ হচ্ছে লতা- পাতা-গুল্ম, কলাগাছ ইত্যাদি। সেগুলো মরে শুকিয়ে পাতা পচে সেখানে দুই ফুটের মতো স্তর জমেছে। এই কারণে সেখানে আগুনটা পাতার নিচ থেকে জ্বলছে।”
সুন্দরবনে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে সোমবার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বন বিভাগ।
কমিটির প্রধান এবং সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ জয়নাল আবেদিন ধারণা করছেন, অনেকে ধারণা করছেন মৌয়ালদের (যারা বন থেকে মধু সংগ্রহ করেন) কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে। অথবা কারোর বিড়ি সিগারেটের আগুন ফেলে রাখা থেকে আগুন জ্বলতে পারে।
শুকনো পাতা জমে যাওয়া এবং অনেকদিন বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আগুনটি অনেকক্ষণ জমছে বলে তিনি ধারণা করছেন। তদন্ত কমিটি আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি বের করবে বলে তিনি জানান।
সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন লিটন স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, তাদের ধারণা, স্থানীয় মৌয়ালদের কেউ মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে আগুন দিয়ে থাকতে পারে। সেই আগুন থেকে বনের আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন ধারণা করছেন।
সুন্দরবন বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০২ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এ নিয়ে ২৩ বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটলো। সর্বশেষ এই বছর আটই ফেব্রুয়ারি ধানসাগর এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল।
এর আগের ২২ বারের আগুনের ঘটনায় সুন্দরবনের যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৩ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে বন বিভাগ হিসাব করেছে।
এসব আগুনের পেছনে বন ব্যবহারকারীদের অসচেতনতা, বন সংলগ্ন নদ-নদী মরে যাওয়া, অসচেতনতা, নাশকতা, ফেলে দেয়া বিড়ি-সিগারেটের আগুনকে দায়ী করা হয়। -বিবিসি বাংলা।
বার্তা বাজার/এসজে