১৯ দিনে ১৫ ট্রেন লাইনচ্যুত

বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যানুসারে, গত আগস্টে প্রথম ১৯ দিনেই ১৫টি ট্রেনের লাইনচ্যুতি ঘটে। ২০১৪ সাল থেকে গত জুন পর্যন্ত ট্রেনে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার মধ্যে লাইনচ্যুতি ছিল ৭৩ শতাংশ।

গত জুন পর্যন্ত সাড়ে ১০ বছরে চার হাজার ৭৯৮ বার ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে, প্রাণহানি ঘটে ৩৯২ জনের। এর পেছনে রেলওয়ের প্রকৌশলী ও কর্মীদের অবহেলাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রেলপথ, ইঞ্জিন ও বগি রক্ষণাবেক্ষণে সাধারণ কর্মচারী থেকে প্রকৌশলীদের অবহেলায় ট্রেনের চাকা চলতে গিয়ে লাইন থেকে পড়ে যাচ্ছে। রেলপথে দুর্ঘটনার প্রায় ৭৩ শতাংশই ঘটছে ট্রেনের চাকা পড়ে যাওয়া বা লাইনচ্যুতিতে। গত ঈদ যাত্রায় অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে লাইনচ্যুত হয়ে একদিনের ট্রেন পরের দিনও চলাচল করেছে। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ কমলেও স্বাভাবিক সময়েও ট্রেনের লাইনচ্যুতি ঘটছে অহরহ। গত ঈদ যাত্রায় রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগে ট্রেন চলেছে তিন থেকে ২৩ ঘণ্টা বিলম্বে। ঈদ যাত্রার সময়সূচি বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিম রেলে মহাব্যবস্থাপক বদলি করা হয়েছে। তার পরও অবস্থার উন্নতি হয়নি। কারণ মাঠপর্যায়ে রেলপথ, রেল সেতু নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণই হচ্ছে না, পরিদর্শন কর্মসূচিও মুখ থুবড়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুরের কাউনিয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় একজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক লোক আহত হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই গতকাল শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় জালালাবাদ এক্সপ্রেসের বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে চার ঘণ্টা বন্ধ থাকে ওই পথে রেল যোগাযোগ।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ শহরের কেওয়াটখালীতে তিস্তা এক্সপ্রেসের একটি বগি রেলপথ থেকে পড়ে যায়। দুই ঘণ্টা ২০ মিনিট ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। একই দিন দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের মহানগর গোধূলি ট্রেনের চাকা রেলপথ থেকে পড়ে যায় ফেনী-শার্শদী সেকশনের হরষপুরে।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে রেলপথ ভেঙে সাড়ে তিন ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। ওই দুর্ঘটনার পর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলস্টেশনের দুই দিকের আউটার সিগন্যালের মধ্যবর্তী অংশে রেলপথে প্রয়োজনীয় পাথর নেই। চলতে গিয়ে ট্রেন স্বাভাবিকভাবে দুলে ওঠে। রেলস্টেশনের সামনে ও পাশে বাগুয়ায় আগেও দুইবার রেলপথ ভেঙে পড়েছিল।
শত শত স্লিপার থেকে প্যান্ডেল ক্লিপও চুরি হয়েছে রেলপথে। রেলপথে সঠিক পরিমাণে পাথর ও স্লিপার না থাকা ছাড়াও রেলপথ নিয়মিত পর্যবেক্ষণে নিযুক্ত কর্মী ও প্রকৌশলীদের অবহেলা, ইঞ্জিন ও বগি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অবস্থা আরো সঙ্গিন হয়েছে। এ বিষয়ে রেল ভবনে অভিযোগও এসেছিল; কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

রেলওয়ের ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, রেলপথ বা ট্রেনের ত্রুটি হলে বগি লাইনচ্যুত হয়। রেলপথে পাথর কম থাকা, স্লিপার ও নাটবল্টু আলাদা হলে ট্রেনের চাকা রেলপথ থেকে পড়ে যায়। জীর্ণ রেলপথে গতি বেশি হলেও লাইনচ্যুতি ঘটে। এ ছাড়া বগি ‘আন্ডার গিয়ারে’ ত্রুটিতেও ট্রেনের চাকা পড়ে যেতে পারে।

গত ২৩ জুন রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় উপবন ট্রেনের ছয়টি বগি লাইন থেকে পড়ে চার যাত্রীর প্রাণহানির পর তদন্ত কমিটি রেলপথে ত্রুটির বিষয়টি উল্লেখ করে এবং সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের দায়ী করে। তারপর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জুলহাসকে বদলি করা হয়। তবে ফেঞ্চুগঞ্জ, কুলাউড়াসহ বিভিন্ন স্থানে রেল সেতু সংস্কার করা হয়নি।

প্রায় দুই কিলোমিটার পর পর রেলপথ দেখভাল করে ‘গ্যাং’ নামে রেলের কর্মী বাহিনী। কিম্যান, ওয়েম্যান, গ্যাংম্যানদের রেলপথ নিয়মিত পাহারা দেওয়ার কথা। কিম্যান রেলপথে এক পাশ দিয়ে একবার হেঁটে অন্য পাশ দিয়ে ফিরে আসে। তাতে নাটবল্টু, ক্লিপ, ফিশপ্লেট ঠিকঠাক আছে কি না ধরা পড়ে। নুড়িপাথর না থাকলে ঊর্ধ্বতনদের জানানোর দায়িত্ব ওয়েম্যানদের। কিম্যান ও ওয়েম্যানের কাজের সমন্বয়কারী গ্যাংম্যানদের মাঠে পাওয়া যায় না বলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ আসছে। কয়েকটি গ্যাং নিয়ে গঠিত ম্যাট। ম্যাটগুলোর কাজ দেখভাল করেন পরিদর্শক ও প্রকৌশলীরা। ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশের প্রকল্প পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, ‘পরিদর্শকরা মাঠে নিয়মিত যান না। কোনো এলাকায় বছর গেলেও পরিদর্শন করা হয় না বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর