হাতিয়ায় এএসপি ও ওসিকে অবরুদ্ধ করে স্থানীয়দের বিক্ষোভ

নোয়াখালী হাতিয়ায় লক্ষীপুর জেলার রামগতি সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার সাইফুল আলম চৌধুরী ও রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা। দীর্ঘ ৪ ঘন্টা বিক্ষোভ মিছিলের পর নোয়াখালী জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) বিজয়া সেন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার হরনি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড টাংকিরঘাট এলাকার টাংকির বাজার পুলিশ ক্যাম্পের গোল ঘরে ঘটনাটি ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিকেলে লক্ষীপুর জেলা সহকারি পুলিশ সুপার (রামগতি সার্কেল) সাইফুল আলম চৌধুরী ও রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন টাংকির বাজার পুলিশ ক্যাম্পে আসেন। পরে তাঁরা ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ক্যাম্পের গোল ঘরে বসেন। এর কিছুক্ষণ পর ওই গোল ঘরে আসেন স্থানীয় ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাইন উদ্দিন, ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. বাবুল হোসেন সুজন ও টাংকির বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন।

পরে পুলিশ গোল ঘর থেকে তাদের বের করে দিলে বিষয়টি বাজারে উপস্থিত লোকজনের নজরে আসে এবং তারা উত্তেজিত হয়ে ক্যাম্প ঘেরাও করে। কিছুসময়ের মধ্যে স্থানীয় কয়েক হাজার লোকজন একত্রিত হয়ে অবরুদ্ধ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গ্লোগান দিয়ে রাত ৯টা বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে।

হরনি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. বাবুল হোসেন সুজন অভিযোগ করে বলেন, রামগতি সার্কেল ও রামগতি থানার ওসি বিকেলে টাংকির বাজার পুলিশ ক্যাম্পে আসেন । উনাদের দেখে আমি, ৪নং ওয়ার্ডের সালা উদ্দিন মেম্বার, ৫নং ওয়ার্ডের মাইন উদ্দিন মেম্বার ও সাখাওয়াত মাস্টার ক্যাম্পের গোল ঘরে যায়। এসময় আমাদের দেখে উত্তোজিত হয়ে অকর্থ্য ভাষায় আমাদের গালমন্দ করে বের হয়ে যেতে বলেন সহকারি পুলিশ সুপার সাইফুল আলম চৌধুরী। একপর্যায়ে তিনি আমাদের দিকে তেড়ে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ওই কক্ষ থেকে বের করে দেন।

তিনি আরো বলেন, উনারা উদ্দেশ্য মূলক ভাবে রামগতি থেকে হাতিয়ায় এসেছেন। এরআগেও একাধিক বার রামগতির পুলিশ ও লোকজন বিভিন্ন সময় আমাদের সীমানায় এসে আমাদের লোকজনকে মারধর করেছে। আমাদের লাঞ্চিত করা ও তাদের কর্তৃক হয়রানি থেকে স্থায়ী ভাবে রক্ষা ফেতে লোকজন তাদের অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল করছে।

টাংকির ঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত বলেন, মেম্বাররা সহ আমি ক্যাম্পের গোল ঘরে গেলে সার্কেল সাহেব মেম্বাদের ওপর উত্তেজিত হয়ে সবাইকে বের হয়ে যেতে বলেন। পরে আমরা দ্রুত ওইস্থান থেকে বের হয়ে চলে আসি।

রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন, সন্ধ্যায় আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে আমাদের অধিনে থাকা টাংকির ঘাট ক্যাম্পে আসি। ক্যাম্পে আমাদের মিটিং চলাকালে স্থানীয় মেম্বাররা আসলে আমরা উনাদের পরে আসতে বলি। কিন্তু উনারা বাইরে গিয়ে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে উত্তেজিত করে পরিস্থিতি গোলাটে করেছে।

রামগতি সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার সাইফুল আলম চৌধুরী মেম্বারদের সাথে খারাপ আচারণ ও ধাক্কা দেওয়ার বিষয়টি সত্য নই উল্লেখ করে বলেন, টাংকির বাজার ক্যাম্পের পাশে নোয়াখালী অঞ্চলে আরও একটি আরআরএফ (রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স) ক্যাম্প রয়েছে। আমরা ক্যাম্পের গোল ঘরে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সদের নিয়ে মিটিং এ বসার কিছুক্ষণ পর কোন কিছু না বলে একজন লোক বসে পড়েন। আমি উনার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি মাইন উদ্দিন মেম্বার বলে পরিচয় দেন। আমি উনি এবং সাথে থাকা উনার লোকদের পরে আসার জন্য বলি। কিন্তু উনারা বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নিতে লোকজনকে উত্তেজিত করে তুলেন। এ ঘটনাটি রামগতি ও হাতিয়ার সীমানা বিরোধের যোগসূত্র থাকতে পারে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) বিজয়া সেন বলেন, হাতিয়ায় এএসপি ও ওসিকে অবরুদ্ধ করার বিষয়টি জানার পর আমরা টাংকিরবাজার পুলিশ ক্যাম্পে যাই। রামগতি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল আলম চৌধুরী স্থানীয় মেম্বারের সঙ্গে কিছুটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে বলে বিষয়টি স্বীকার করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন । এরপর বিষয়টি নিয়ে আমি স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলি। তাদের দাবি ছিল রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের পাশাপাশি নোয়াখালীর পুলিশ ওই ক্যাম্পে থাকতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমি সাথে সাথে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয়দের দাবিকৃত নোয়াখালীর ১০ জন পুলিশ সদস্যকে ওই ক্যাম্পে সংযুক্ত করেছি। যারমধ্যে একজন ইন্সপেক্টর, একজন উপ-পরিদর্শক, একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক ও সাতজন কনস্টেবল থাকবেন।

নোয়াখালী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, জায়গা আমাদের, মানুষ আমাদের। চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে সব কিছু আমাদের। তারপরও লক্ষীপুরের পুলিশ ও মানুষের দ্বারা হয়রানির শেষ নাই। এর আগেও রামগতির পুলিশ এসে আমাদের লোকজনকে নানাভাবে হয়রানি করেছে। আজও তারা আগের কায়দায় লোকজনকে হেনস্তা করায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর