হিলিতে ৬২৫ মিলিয়ন টন আয়রন মজুদের সম্ভাবনা, বাংলাদেশের প্রায় ৩০ বছর ঘাটতি মিটবে

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার আলীহাটে মূলবান লৌহ আকরিক সমৃদ্ধ শিলার সন্ধান পেয়েছে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ (জিএসবি)। চুড়ান্ত ফলাফলের জন্য আকরিক লৌহ খনির অনুসন্ধান জরিপ কাজ শুরু করেছে যুক্তরাজ্যের ডিএমটি কলন্সাটেন্ট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানী।

বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নে প্রিলিমিনারী স্ট্যাডি ফর ডেভেলপমেন্ট অব আলীহাট আয়রন ও’র ডিপোজিট এ্যাট নামক এই কাজের উদ্বোধন এবং পরিদর্শন করেন দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক।

এরআগে মূল্যবান খনিজ সম্পদের সন্ধানে গত ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত হাকিমপুর উপজেলায় ৪টি ভুতাত্তি¡ক বোরহোল ড্রিলিং করে জিএসবি। প্রাথমিক ভাবে ভুতাত্ত্বিক বোরহোল ড্রিলিং করে ৪০৮ থেকে ৬৩২ মিটার গভীরতায় ৩ স্তর বিশিষ্ট লৌহ আকরিক শিলার অস্তিত্ব পায় তারা। জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ এর রিপোর্ট অনুযায়ী প্রাথমিক ভাবে ৫ দশমিক ০ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৬২৫ মিলিয়ন টন আয়রন এই এলাকায় মজুদ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নতুন করে শুরু হওয়া জরিপ কাজে ৬ থেকে ১০ স্কয়ার কিলোমিটার এলাকার ভিতরে পৃথক আরো ৫ জায়গায় এই অনুসন্ধান জরিপ কাজ চালাবে যুক্তরাজ্যের কোম্পানীটি। অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে মূলবান লৌহের পাশাপাশি ক্রোমিয়াম ও নিকেল সহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি ধাতু থাকতে পারে বলে ধারণা করছে জরিপকারী দলটির ভুতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা। ডিপোজিশনাল হিস্ট্রি অনুযায়ী এই এলাকায় মাটির নিচে থাকা

সেডিমেন্টারী মেটামরফিক অরিজিন সমৃদ্ধ লৌহ আকরিকের বয়স আনুমানিক ১৭০০ থেকে ৩৮০০ মিলিয়ন বছর।

স্থানীয় তাহাজ্জত আলী নামে এক বয়োজৈষ্ঠ্য বলেন, ‘আমাদের এই এলাকাটি খুবই অনুন্নত। এখান থেকে খনিজ সম্পদ উত্তোলন করা সম্ভব হলে আমাদের এলাকার উন্নয়ন হবে। জায়গা জমির দাম বাড়বে। পাশাপাশি রাস্তাঘাটেরও ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে।’

ইয়াকুব মোল্লা নামের আরেকজন বলেন, ‘চুড়ান্ত ভাবে লোহা উত্তোলন সম্ভব হলে আমাদের এলাকায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে।

গ্রামের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে। আমাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি হবে। আমরা চাই জরিপ কাজ শেষ করে দ্রুত খনিজ সম্পদ উত্তোলন কাজ শুরু করা হোক।’

সংশ্লিষ্ট আলীহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমরা সহ এলাকাবাসী জরিপকারী দলকে সব ধরণের সহযোগীতা করছি। আমাদের এলাকায় এত মূল্যবান সম্পদের মজুদ আছে, এটা আমাদের জন্য গর্বের। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে অতিদ্রুত সময়ে যাতে লোহা উত্তোলন কাজ শুরু করে সরকার।’

জরিপ কাজের বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘আমরা বর্তমানে প্রিলিমিনারী স্ট্যাডি করছি। এই স্ট্যাডির মাধ্যমে আমরা আরো ভালো ভাবে নিশ্চিত হতে পারব যে এখানে কি পরিমান আয়রণ আছে। এরপর উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ শুরু করা হবে।’

এদিকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বলেন, ‘খনিজ সম্পদ উত্তোলন শুরু হলে ভূমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি

জমির মালিকদের দীর্ঘ মেয়াদী লাভের বিষয়ে সরকার ভাবছে। এই খনির ভুগর্ভস্থ থেকে মূলবান সম্পদ উত্তোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ বছর পূর্বের আয়রনের ঘারতি পূরণ করা সম্ভব বলে। আমাদের দেশ সম্পদে ভরপুর। ইতিমধ্যে দীর্ঘদিন থেকে আমরা আমাদের দিনাজপুরের বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে সর্বোচ্চ মানের কয়লা উত্তোলন করে আসছি।’

বার্তা বাজার/জে আই

 

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর