রাঙ্গাবালীতে ভাঙা বাঁধে ঝুঁকি, ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা!

বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। কিন্তু ভাঙা বাঁধ নিয়ে শঙ্কায় উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মানুষ। তিন দিকে নদী ও একদিকে সাগর ঘেরা এ জনপদের মানুষের কাছে দুর্যোগের খবর মানেই আতঙ্ক। কারণ, নেই টেকসই বাঁধ। নেই পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্রও। বিচ্ছিন্ন এমন স্থানও রয়েছে, যেখানে বাঁধ কিংবা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র কোনটাই নেই।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় ৮৮ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে বলে জানালেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। জানা গেছে, গত বর্ষা মৌসুম ও নদীভাঙনে উপজেলা বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধের সংস্কার করা হলেও উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআডা এলাকার প্রায় ৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ঝূকিপূর্ণ রয়ে গেছে। ফলে স্বাভাবিক জোয়ারে চেয়ে একটু বেশি পানি হলেই ওই এলাকার ভাঙা ও সংস্কারহীন বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশের শঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার চালিতাবুনিয়া এলাকার উত্তর চালিতাবুনিয়ায় বেড়িবাঁধের একাংশ দিয়ে লোকালয় পানি প্রবেশ করবে বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। এছাড়াও বেরিবাঁধহীন রয়েছে উপজেলার চরনজির, চরকাশেম, কাউখালী, চরকানকুনি। জলোচ্ছাসে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে ওইসব এলাকাসমূহগুলো।

উপজেলার চরআন্ডা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, এখানে বেড়িবাঁধের অনেকাংশ ভাঙা ফলে খুব দ্রুত পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এছাড়া চরআন্ডায় প্রায় ৫ হাজার লোকজন রয়েছে একটি মাত্র সাইক্লোন শেল্টার যা পর্যাপ্ত নয়। এখন শুনি আকেটা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে, সেটা আসলেতো আমরা শেষ।

এখানকার আরেক বাসিন্দা তুহিন হাওলদার বলেন, চরআন্ডা এলাকার চারপাশে নদী। স্বাভাবিক জোয়ারে চর আন্ডার সব কিছু তলাইয়া যায়। পূর্ব এবং পশ্চিম পার্শে¦ বেড়িবাঁধ নাই। আমরা সাধারণ মানুষ খুব কষ্টে আছি। বন্যা অইলে যে আমরা কোথায় যাবো তার কোন ভালো ব্যবস্থা নাই। এখানে নামেই মাত্র একটা মাত্র সাইক্লোন শেল্টার যেখানে প্রায় দেড় থেকে ২শ’ত লোক আশ্রয় নিতে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্বে) আসাদুজ্জামান বলেন, আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মোখার খবর পেয়ে আমরা কৃষকদের খেতের ফসল তুলে ফেলার পরামর্শ দিয়েছি। সে অনুযায়ী বেশিরভাগ খেতের ফসল কৃষক তুলে ফেলেছে।

এ বিষয়ে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ বলেন, ইতোমধ্যে সাড়ে ১৪ শ’ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ চলছে। তবে চরআন্ডার ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এখনও বিধ্বস্ত রয়েছে। আমরা সেটি নির্মাণের জন্যও প্রস্তাব পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে বাঁধটি নির্মাণকাজ শুরু হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, আমরা ইতোমধ্যে একটি মিটিং করেছি। এবং সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখার জন্য বলছি। যদি সতর্ক সংকেত বাড়ে সেক্ষেত্রে আমরা মাঠে নামবো মাইকিং করে সচেতনতা বাড়াবো এবং আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বলবো। এসময় তিনি আরও বলেন, যেহেতু চরআন্ডা খুবই ঝূকিপূর্ণ সেহেতু আমরা ওখানকার জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলবো। এদের ব্যাপারে আমাদের বিশেষ নজর থাকবে। প্রয়োজন হলে একজন কর্মকর্তাকে ফোকাল পার্সন হিসেবে ট্যাগ (যুক্ত) করে রাখবো। এখন তো আশ্রয় কেন্দ্রে তৈরি করতে পারবো না। আবহাওয়ার বিশেষ পরিবর্তণ হলে আমরা ওখান কিছু লোকজন উদ্ধার করে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি। আর বেড়িবাঁধের বিষয়ে আমাদের প্রস্তাব পাঠানো রয়েছে।

উল্লেখ্য, বুধবার আবহাওয়ার এক বুলেটিনে বলা হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি ঘুর্ণিঝড় মোখায় রুপান্তরিত হয়েছে‌।

এদিকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমদ্র বন্দরসমূহকে ২ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর