উপজেলা প্রশাসনের নিকট সাভার/আশুলিয়ার নদী ও জলাশয় দখলকারীদের পূর্ণ তালিকা নেই

অনুসন্ধানী প্রতিবেদনঃ পর্ব-১- ঢাকার সাভার উপজেলা প্রশাসনের নিকট সাভার ও আশুলিয়ার নদী/খাল তথা জলাশয় দখলকারীদের পূর্ণ তালিকা নেই। সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজুর রহমান এর নিকট তথ্য অধিকার আইনে এসংক্রান্ত তথ্য চেয়ে প্রাপ্ত তথ্য থেকে বিষয়টি জানা যায়।

এর আগে, গত ৬ মে, ২০১৯ ইং তারিখে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজুর রহমান এর নিকট অথ্য অধিকার আইনে এই অঞ্চলের নদী/জলাশয় দখলকারীদের তালিকা চাওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে গত ২২ জুলাই, ২০১৯ ইং তারিখে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার থেকে এসংক্রান্ত তথ্য (স্মারক সংখ্যা- ০৫.৪১.২৬৭২.০০১.২২.০৩৭.১৯৬৮৫/১) পাওয়া যায়।

সাভার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাভার রাজস্ব সার্কেল এখনও এই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলমান রেখেছেন, আমিনবাজার রাজস্ব সার্কেল এর আওতাধীন নদী ও জলাশয় দখলদার নেই। তবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেল এসংক্রান্ত একটি তালিকা প্রেরণ করেন যা ২০১৬ ইং সালে করা হয়েছিলো এবং হালনাগাদ তথ্য তাদের কাছে নেই।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সাভার গলফ ক্লাবে সাভারের নদী ও জলাশয় রক্ষা কমিটির আয়োজনে এক সেমিনারে ভূতপূর্ব সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাসেল হাসান উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, সাভার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাভার/আশুলিয়ার নদী/জলাশয় দখলকারী ৬৫ জনের একটি তালিকা ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। অথচ তথ্য অধিকার আইনে এসংক্রান্ত সেই ৬৫ জনের তালিকা চাওয়ার পরেও বর্তমান সাভার উপজেলা প্রশাসন ওই তালিকা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেল এর ২০১৬ ইং সালে করা তথ্যানুযায়ী এই অঞ্চলের বিভিন্ন মৌজায় মোট ১১টি প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তি আশুলিয়ার জলাশয় দখল করে রেখেছেন। সেই প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তির তালিকাঃ

(১) পলাশবাড়ী মৌজায় খালের জায়গায় ইনোভেটিভ বহুমুখি সমবায় সমিতি লিঃ এর ম্যানেজার মোঃ শহিদ, পিতা-অজ্ঞাত, সাং বাইপাইল, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা, কর্তৃক (ক) ১১৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১৫ ফুট প্রস্থের ১টি টিনশেড গ্যারেজ এবং (খ) ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ২০ ফুট প্রস্থের ১টি টিনশেড মসজিদ দখলদার রয়েছে। (তবে এই তথ্য ২০১৬ সালের, সম্প্রতি পলাশবাড়ী মৌজায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সম্প্রসারণ কাজের জন্য বেশ কিছু অবৈধ দখল উচ্ছেদ হয়েছে, পার্ল গার্মেন্টস এর সামনে একটি মসজিদও এই উচ্ছেদ কর্মকান্ডের ভিতরে পড়েছে)

(২) পলাশবাড়ী মৌজায় জলাশয় দখল করে যমুনা অটোরিকশার কারখানা, মালিকঃ গোলাম রব্বানী, পিতা-অজ্ঞাত, সাং পলাশবাড়ী, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা কর্তৃক ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ২০ ফুট প্রস্থের ১টি টিনশেড ঘর দখলদার রয়েছে।

(৩) বাইপাইল মৌজায় জলাশয় দখল করে হাজী মোকসেদ আলী, পিতা- অজ্ঞাত, সাং বাইপাইল, বসুন্ধরা, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা কর্তৃক ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১০ ফুট প্রস্থের ১টি টিনের ছাপড়া ঘর দখলদার রয়েছে।

এগুলি ছাড়াও নিম্নোক্ত আরও ৮টি প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তি আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে জলাশয় দখল করে রেখেছেন, তবে উপজেলা প্রশাসন প্রেরিত তথ্যে এগুলির মৌজা উল্লেখ করেন নাই বিধায় মৌজা জানানো সম্ভব হলো না।

(১) এম নাজনীন বেগম জং কাজী আজিজুর রহমান প্রযত্নে লেঃ কর্ণেল রাব্বি সাদী, লেঃ কর্ণেল হাসান মোরশেদ কর্তৃক ৮০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ৮ ফুট প্রস্থের ১টি সেমিপাকা কাঠামো দখলদার রয়েছে।

(২) মমতাজ আলী, পিতা- অজ্ঞাত, সাং জামগড়া, আশুলিয়া, ঢাকা কর্তৃক ১৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১০ ফুট প্রস্থের ১টি সেমিপাকা কাঠামো দখলদার রয়েছে।

(৩) মেজবাহুর রহমান তুহিন, পিতা-অজ্ঞাত, সাং জামগড়া, আশুলিয়া, ঢাকা কর্তৃক ৮০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১০ ফুট প্রস্থের একতলা দালান ও সেমিপাকা ঘর দখলদার রয়েছে।

(৪) এস সুহি ইন্ডাস্ট্রিজ পার্ক লিঃ, সাং জামগড়া, আশুলিয়া, ঢাকা কর্তৃক ৪৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১০ ফুট প্রস্থের দালান, টাচ টিনের কাঠামো দখলদার রয়েছে।

(৫) আলম এন্টারপ্রাইজ, সাং জামগড়া, আশুলিয়া, ঢাকা কর্তৃক ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ৩ ফুট প্রস্থের ১টি কাঁচা ঘর দখলদার রয়েছে।

(৬) দারদা ওয়াশ ডাইং ফ্যাক্টরী লিঃ, সাং জামগড়া, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা কর্তৃক ৪৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১০ ফুট প্রস্থে পরিমাপের ময়লার ভাগাড় দ্বারা খাল বন্ধ করে রেখেছে।

(৭) প্যারাগন পোল্ট্রি ফার্ম, ম্যানেজার মশিউর রহমান, পিতা-অজ্ঞাত, সাং জামগড়া, আশুলিয়া, ঢাকা কর্তৃক ৯০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ৫০ ফুট প্রস্থের সেমিপাকা কাঠামো দ্বারা জলাশয় দখল করে আছে।

(৮) মোঃ জালাল মোল্লা, মোঃ আতা মোল্লা, পিতা- গিয়াস উদ্দিন মোল্লা, সাং বেরন মোল্লা বাজার, আশুলিয়া, ঢাকা কর্তৃক ১২৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১০ ফুট প্রস্থের সেমিপাকা ও কাঁচা কাঠামো দ্বারা জলাশয় দখলদার রয়েছে।

উপরোক্ত ৮ টি দখলদার প্রতিষ্ঠান /ব্যক্তি আশুলিয়ার কোন মৌজা/এলাকার জলাশয় দখলদার রয়েছে সে সম্পর্কে সাভার উপজেলা প্রশাসন নির্দিষ্ট তথ্য প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় ঢাকা জেলা প্রশাসনের নিকট তথ্য অধিকার আইনে সাভার/আশুলিয়ার হালনাগাদ নদী/জলাশয় দখলদারদের তালিকা চাওয়া হয়েছে৷ পরবর্তী পর্বে সে সম্পর্কীয় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

এদিকে, নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন জা‌নি‌য়ে‌ তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, নদী রক্ষা আন্দোলনে আমি আপনাদের সঙ্গে আছি, থাকবো। কেননা প্রভাবশালী ও বিত্তশালী চক্রের হাত থেকে আমাদের নদীগুলোকে রক্ষা করতে হবে। সবাই একযোগে কাজ না করলে নদীগুলো রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই আসুন সবাই মিলে নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।

শনিবার (৩ আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে নোঙর ও নদী রক্ষা জোট আয়োজিত ‘নদী ও পরিবেশ সুরক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বার্তাবাজার/আরএইচ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর