হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে স্থানীয় যোগসাজসে চাঁদাবাজির অভিযোগ

ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানাধীন বিভিন্ন স্পটের পরিবহন এবং ফুটপাত থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে সাভার হাইওয়ে থানার কতিপয় পুলিশ সদস্য এবং স্থানীয় আওয়ামীলিগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের দৃষ্টি বিশেষ করে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে বাইপাইল ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের কার্য্যালয়ে কর্মরত কিছু পুলিশ সদস্যের দিকে। বিস্ময়কর ভাবে এই কর্মকান্ডে যৌথভাবে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সহযোগী ভূমিকায় থাকার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় জন প্রতিনিধি সহ কতিপয় আওয়ামীলিগ নেতা ও অন্যান্য প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে।

ঘঠনার আদ্যপান্ত উদঘাটনে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, আশুলিয়া মহাসড়কের বেশ কয়েকটি উল্ল্যেখযোগ্য স্পটে ব্যাটারী চলিত অবৈধ অটোরিক্সা থেকে “রেকার বিল” উত্তোলনের নামে চাঁদা আদায় এবং নবীনগর কুরগাঁও সড়ক থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত রাস্তার আশেপাশে এবং নবীনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে ধামরাইগামী লেগুনাস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিপুল অঙ্কের চাঁদা উত্তোলন করা হয়। এছাড়াও নয়ারহাট মাছ বাজার, পল্লীবিদ্যুৎ বাসস্ট্যান্ড, সিএসজি স্ট্যান্ড, পলাশবাড়ী ট্রাক স্ট্যান্ড সহ ঢাকা চন্দ্রা মহাসড়কের ইপিজেড অঞ্চলের কাভার্ড ভ্যান স্ট্যান্ড, পুরাতন ইপিজেড ওভারব্রীজ থেকে বলিভদ্র বাজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্পট থেকেও চাঁদা আদায়ের তথ্য প্রমান সহ অভিযোগ বার্তা বাজারের হাতে উঠে এসেছে।

বার্তা বাজারের অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের কাছে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অটো চালক ভিডিও বক্তব্যে তার অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর এলাকায় আমি অটো রিকশা চালায়ে জীবিকা নির্বাহ করি। তবে, প্রায়শ যাত্রীদের অনুরোধে মহাসড়কে উঠলে পুলিশ আমাদের আক্রমন করার পাশাপাশি গাড়ি থানায় আঁটকে রেখে সোর্সদের মাধ্যমে টাকা আদায় করে। কথা মোতাবেক ২৬০০ টাকা দিলে পুনরায় গাড়ি ছেড়ে দেয়। এটা অমানবিক।

নবীনগর সেনা শপিং কমপ্লেক্সের বিপরীতে পশ্চিম পাশে কুরগাঁ রোড থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ফুটপাত ধরে নিরিবিলি এলাকা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দু’পাশে প্রায় আড়াইশো’ থেকে তিনশো’ ভ্রাম্যমান দোকান রয়েছে। এদেরকে পুঁজি করে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় চাঁদাবাজীর অভিযোগ পাওয়া যায় মোঃ মাসুদ নামের জনৈক ব্যাক্তির বিরুদ্ধে। এসব ভ্রাম্যমান দোকান থেকে প্রতি শুক্রবার ১০০ টাকা এবং সপ্তাহের অন্যান্য অনন্য দিন ৫০ টাকা এবং ভ্যান প্রতি রোজ ১৫০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হয়। যার পরিমান প্রতি মাসে প্রায় লক্ষ টাকা।

এ বিষয়ে চাঁদা উত্তোলনকারী মোঃ মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তিনি বিষয়টি সরাসরি এড়িয়ে যান এবং বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জামিনে রয়েছি। আপাতত পরিবেশ পরিস্থিতি না বুঝে কোন মন্তব্য করতে চাই না।

জাতীয় স্মৃতিসৌধের দুই নং গেটের ওভারব্রিজ সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নবীনগর থেকে ধামরাইয়ের কাওয়ালিপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৫০টি লেগুনা চলাচল করে। এসব লেগুনা চালকদের অভিযোগ, শামিম নামের এক ব্যক্তি যিনি এখানে লাইনম্যানের কাজে নিযুক্ত, লেগুনা প্রতি তাকে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে দিতে হয়। আর প্রতি মাসে গাড়ির মালিকগণ লেগুনা প্রতি ৩ হাজার টাকা ফারুক নামের কোন একজন প্রভাবশালী ব্যাক্তিকে দিয়ে আসেন। জনাব ফারুক এই সমস্ত টাকা থেকে সাভার হাইওয়ে থানা ও ধামরাইয়ের অন্যান্য প্রভাবশালী মহলে টাকা দিয়ে সব কিছু ‘ম্যানেজ’ করে রাখেন।

তবে অভিযোগের ভিত্তিতে মুঠোফোনে জানতে চাইলে জনাব ফারুক সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বার্তা বাজার অনুসন্ধানী প্রতিবেদককে ধামরাইয়ের ধুলিভিটায় তার ব্যক্তিগত অফিসে নিমন্ত্রণ করেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি নিজেকে ধামরাইয়ের লেগুনা মালিক সমিতির সেক্রেটারি হিসেবে পরিচয় দেন এবং এ সকল অভিযোগের নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের নাম পরিচয় জানার আগ্রহ ব্যাক্ত করেন।

কথোপকথনের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘লেগুনাগুলি মহাসড়কে চলাচল করছে এগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এগুলো আশুলিয়া ও ধামরাই থানার রিকুজিশন ডিউটি, নির্বাচনের ডিউটি সহ প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহৃত হয়। সেই সুবাদে প্রশাসনের সহায়তায় আমরা এই গাড়িগুলোকে মাঝে মাঝে চালাই। সে ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনে নিযুক্তদের কিছু মাশোয়ারা দিলে আমাদের চলাচলে কোন অসুবিধা হয় না। বিষয়টা এজন্য চাঁদাবাজির মধ্যে পড়ে না।

তবে এভাবে প্রশাসন ম্যানেজ করে কাগজপত্র বিহীন কোনো যানবাহন মহাসড়কে যাত্রী পরিবহন করতে পারে কিনা এই প্রশ্নের সঠিক কোনো উত্তর জনাব ফারুক দিতে পারেন নি।

পাশাপাশি নয়ারহাট ব্রিজের কাছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নিকটস্থ মাছ বাজারের প্রায় ৩০টি দোকান থেকে ‘জায়গার ভাড়া’ (জিপি) হিসাবে দোকান প্রতি প্রতিদিন ১০০ টাকা করে উঠায় লাভলু নামের এক ব্যক্তি। মুঠোফোনে অনুসন্ধানী টিমের কাছে তিনি প্রথমে জানান এই টাকা থেকে কিছু টাকা সাভার হাইওয়ে থানায় দেওয়া হয়। কিন্তু সাক্ষাৎ কথোপকথনের এক পর্যায়ে বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

গভীর জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, এই মাছ বাজারে মাসিক ৩ হাজার টাকা বেতনে তিনি চাকরি করেন। প্রতিদিন ৩০টি দোকান থেকে ৩ হাজার টাকা উঠিয়ে একভাগ পাথালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ানের ঘনিষ্ঠ সালাম নামের একজন, আরেক ভাগ পারভেজ দেওয়ানের ভাগিনা পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেনের বোন জামাই আব্দুল মালেক এবং বাকি টাকা দেওয়ান গোষ্ঠীয় ছালে দেওয়ানের ঘনিষ্ঠ এছহাক দেওয়ান নামের এক ব্যক্তির নিকট পৌছে দেয়া হয়। তবে ইতিপূর্বে ডিনি ছিলেন, তিনি প্রতি মাসে হাইওয়ে থানায় মাসে ৮ হাজার টাকা করে মাসোয়ারা দিতেন।

তবে এ ব্যাপারে পাথালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেনের সাথে যোগাযোগ সম্ভব না হওয়ায় এ বিষয়ে তাদের মৌখিক বক্তব্য পাওয়া যায় নাই।

তবে সাভার হাইওয়ে থানাকে টাকা দিতে বাধ্য করার এক অভিনব কৌশলের কথা অনুসন্ধানী টিমের কাছে জানায় পল্লীবিদ্যুৎ কবরস্থান রোডের মাথা থেকে চাঁদা উত্তোলনকারী রাকিব এবং এই রুটে চলাচলকারী সিএনজির চালক এবং মালিকেরা। এদের চাঁদার টাকার ভাগ আশুলিয়া থানা এবং বাইপাইলের ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের কার্যালয় ও যে পায় সে বিষয়টি এদের বক্তব্যে উঠে আসে।

পল্লীবিদ্যুৎ কবরস্থান রোডের মাথা থেকে গাজীরচট বটতলা পর্যন্ত রুটে প্রায় ৩০টি সিএনজি চলাচল করে। তবে সব গাড়ি মাসোয়ারা দেয় না। এদের মধ্যে মাত্র ২৪টি সিএনজি থেকে প্রতি মাসে সিএনজি প্রতি ১১০০ টাকা করে মাসোয়ারা উঠায় রকিব নামের জনৈক ব্যক্তি। চাঁদা না দিলে হাইওয়ে থানার সহযোগে গাড়ী আঁটকে রেখে ২৬০০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।

চাঁদা উত্তোলনকারী রকিবের সাথে কথোপকথন হলে তিনি জানান, ‘এখান থেকে গাড়ি প্রতি মাসে ১১০০ টাকা নিলে মোট ২৭ হাজার টাকা উঠে। সেই টাকা থেকে সাভার হাইওয়ে থানায় ১২ হাজার, আশুলিয়া থানায় ৩ হাজার এবং বাইপাইল ট্রাফিক বক্সে ১২ হাজার দিতে হয়। এই টাকা না দিলে সিএনজিগুলো গ্যাস আনতে গেলে তখন সাভার হাইওয়ে থানা এবং আশুলিয়া থানা সিএনজি আটকে রেখে ‘রেকার বিল’ নেয় বলেও জানান তিনি। রকিবের নিজেরও সিএনজি চলে এই রুটে। তবে চাঁদার টাকা তোলার কারণে তাকে সিএনজি প্রতি সাড়ে পাঁচশত টাকা দিতে হয়। আর একারণেই এই চাঁদা উত্তোলনেরসাথে তিনি সংশ্লিষ্ট বলে জানান।

বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে কথা হয় চাঁদা উত্তোলনকারী আবুলের সাথে। তিনি বলেন, ‘এই টাকা চার জায়গায় দেওয়া হয়। তখন কোনো সময় ড্রাইভাররাও থাকে, আর একজন সুপারভাইজার থাকে। বর্তমানে আমি টাকা উঠাই না, এখন উঠায় ফজলু। সে এখন সুপারভাইজার। এই টাকা হাইওয়ে থানা, নবীনগর পুলিশ বক্স, বাইপাইল পুলিশ বক্স আর আশুলিয়া থানায় দেওয়া হয়।

এদিকে, আশুলিয়া থানাধীন পল্লী বিদ্যুৎ বাসস্ট্যান্ড এলাকার ঢাকা-চন্দ্রা মহাসড়কের সার্ভিস লেনের একাংশ এবং ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে। পল্লীবিদ্যুৎ কাঁচা বাজার ও ফুটপাত থেকে চাঁদা উঠায় মিজান নামের জনৈক ব্যক্তি। তবে চাঁদার বিষয়ে এখানকার কোনো ব্যবসায়ী তথ্য প্রদান না করায় এবং মিজানের সাথে যোগাযোগ সম্ভব না হওয়ায় অভিযোগের পরিপূর্ন তথ্য নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। তবে এ সকল জায়গা থেকে হাইওয়ে থানা কিংবা আশুলিয়া থানা টাকা পায় কিনা এবিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় নাই।

হাইওয়ের জায়গা দখল করে বাজার গড়ে উঠলে উচ্ছেদ করার দায়িত্ব হাইওয়ে থানা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের। কিন্তু অজানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে পল্লীবিদ্যুৎ বাসস্ট্যান্ড এলাকার ঢাকা-চন্দ্রা সার্ভিস লেনের একাংশ এবং ফুটপাত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দখলে রয়েছে যা উদ্বেগের বিষয়।

ইতোপূর্বে এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সাভার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা সাভার মডেল থানার সাথে সমন্বয় করে আমিনবাজার থেকে রেডিও কলোনি পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্ত করেছি। আশুলিয়া থানার সাথে সমন্বয় করে পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার ফুটপাতও দখলমুক্ত করা হবে।’

কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পল্লীবিদ্যুৎ বাসস্ট্যান্ড এলাকার মহাসড়কের সার্ভিস লেনের একাংশ এবং ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে সাভার হাইওয়ে থানা। এখনো পর্যন্ত দিব্যি ফুটপাত ও সার্ভিস লেন ব্যবসায়ীদের দখলে রয়েছে।

তবে, মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আরাফাত সাকলায়েন জানান, আমরা ফুটপাতে নানান সময় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে থাকি। ক’দিন পার না হতেই ফুটপাতে ব্যবসায়ীরা আবার ব্যবসা শুরু করে। তবে এবার স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে আশ্বস্ত তিনি।

আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় ঢাকা-চন্দ্রা মহাসড়কে অঘোষিত ভাবে মহাসড়কের জায়গায় গড়ে উঠেছে একটি ট্রাকস্ট্যান্ড। আগে এখান থেকে চাঁদা তুলতেন টিটু নামের এক ব্যক্তি। মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এখান থেকে আগে তিনি টাকা তুললেও এখন আর তিনি দায়িত্বে নাই। বর্তমানে এছহাক নামের একজন এখান থেকে টাকা তোলেন।

এছহাকের সাথে যোগাযোগ সম্ভব না হলেও তার পক্ষ থেকে এই ট্রাকস্ট্যান্ড দেখভালের দায়িত্বে থাকা আমজাদের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, বর্তমানে এখানে বাইরের একটি ট্রাক ১২ ঘন্টা পার্কিং করতে দিতে হয় ১০০ টাকা। তিনি সহ আরও কয়েকজন যারা স্ট্যান্ডের ‘দেখাশুনা’ করেন, এই টাকা তারা নিজেদের জন্য খরচ করেন। আর পার্মানেন্টভাবে যে ট্রাকগুলো এখানে থাকে, সেক্ষেত্রে মাসে ট্রাক প্রতি ২ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। বর্তমানে ৩০টি ট্রাক এই স্ট্যান্ডে থাকে। তাদের থেকে উত্তোলন করা ৬০ হাজার টাকা সাভার হাইওয়ে থানা, আশুলিয়া থানা, বাইপাইল পুলিশ বক্স এবং মানিকগঞ্জ হাইওয়ে থানায় ভাগ করে দেওয়া হয়।

বাইপাইল স্ট্যান্ড থেকে জিরাবো রুটে আনুমানিক দেড়শত লেগুনা চলাচল করে। এখান থেকে লেগুনার ‘সিরিয়াল ঠিক করে’ দিতে প্রতিদিন লেগুনা প্রতি ২০ টাকা চাঁদা উঠায় সেলিম নামের একজন। আর প্রতিমাসে লেগুনা প্রতি ‘মান্থলি’ ৩ হাজার করে টাকা উঠায় মেহেদি নামের আরেক ব্যক্তি। লাইনম্যান সেলিমের সাথে যোগাযোগ না হওয়ায় এবিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায় নাই। তবে মুঠোফোনে মেহেদী এই টাকা উত্তোলনের বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেন।

ইতোপূর্বে, আশুলিয়া থানাধীন ডিইপিজেড সংলগ্ন নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পুরাতন ডিইপিজেড ওভারব্রিজ থেকে বলিভদ্র বাজার পর্যন্ত ফুটপাতে অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজীর অভিযোগ এসেছিলো এক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির বিরুদ্ধে। তিনি সাভার উপজেলার স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ মন্ডল।

সেইসময় বিষয়টি অনুসন্ধান করে জানা যায়, ডিইপিজেডের পুরাতন জোন এলাকা হতে বলিভদ্র বাজার পর্যন্ত চার শতাধিক দোকান দেখাশোনা করে আতিক ও জাহাঙ্গীর নামের দুইজন। সেখানে টাকা তোলার জন্য রুহুল নামের একজনকে বেতন দিয়ে রাখা হয়েছে। অপরদিকে, বলিভদ্র এলাকার পারমানবিক শক্তি কমিশন অফিসের সামনের ২ শতাধিক দোকান থেকে টাকা নেন কামাল নামের একজন। তারা সবাই ধামসোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ মন্ডলের লোক- এমনটা ইতোপূর্বে গণমাধ্যমকে দেয়া এক ভিডিও বক্তব্যে জানিয়েছিলেন ওই চাঁদাবাজ চক্রের আগের নিয়োগকৃত চাঁদার টাকা উত্তোলনকারী নুরন্নাহার নামের এক নারী। তবে টাকা কাকে কাকে দেয় সেটা বলতে পারেন না নুরন্নাহার।

অনুসন্ধানকালে আতিক এবং জাহাঙ্গীর এর সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় এবিষয়ে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ মন্ডল চাঁদাবাজির সাথে তার জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, ‘আমার এলাকায় এসব চাঁদাবাজী হয় না এবং আমিও এসবের সাথে জড়িত না। কারা এই চাঁদা উঠায় তাদের নাম বলুন আমরা ব্যবস্থা নিবো।

বর্তমান অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ডিইপিজেড এর ফুটপাতের এই চাঁদাবাজি আগের চক্রই বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ পুলিশ কিংবা প্রশাসন নির্বিকার রয়েছে। নাচেৎ কীভাবে দিনের পর দিন মহাসড়কের ফুটপাত দখল করে এই দোকানগুলো চালু থাকে?- এমন প্রশ্ন সচেতন আশুলিয়াবাসীর। ফুটপাত ও মহাসড়কের জায়গা এভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় মহাসড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এবং বিড়ম্বনা ও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে মুঠোফোনে কল করা হয় সাভার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আজিজুল হক এর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়ে উঠে নি। তবে বিষয়ে বাইপাইল ট্রাফিক বক্সে দায়িত্বে থাকা টি.আই খসরু মাহমুদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করার মতো যথাযথ কর্তৃপক্ষ অথবা দ্বায়িত্বশীল আমি নই। এ বিষয়ে আপনাকে উর্দ্ধোতন কারো বক্তব্য কিংবা পরামর্শ নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। সেই সাথে লিখিত কোন অভিযোগ থাকলে আমি অবশ্যই পেশাদারিত্বের সহিত বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে জানতে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম কামরুজ্জামান এর মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি জানান আমরা সড়ক এবং ফুটপাতের চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য প্রয়োগীক আইনের কার্যকরী ভূমিকা পালন করছি। আশা করছি সাধারণ জনগন অভিযোগ দায়ের করার মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করলে এ বিষয়ে আরো কার্য্যকরী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব।

সর্বশেষ বিষয়টি নিয়ে জানতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্ ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) মোঃ আব্দুল্লাহিল কাফী, পিপিএম কে মুঠোফোনে সংযুক্ত করলে তিনি জানান, যদিও হাইওয়ে পুলিশের বিষয়টি ট্রাফিক মহানগর উত্তরের আওতাভূক্ত নয়, তবুও যথাযথ প্রমান সহ লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা বিষয়টি নিয়ে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিবো।

সংবাদ সহযোগী: ইমদাদুল হক

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর