হাত-পা বেধে গৃহবধুকে নির্যাতন; আবদ্ধ ঘর থেকে উদ্ধার করলো গ্রামপুলিশ

শাশুরীর অনুমতি না নিয়ে শশুর বাড়ীতে না যাওয়ায় সোহাগী বেগম (২৭) নামের এক গৃহবধুকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শাশুরি, ভাশুর, ননদ, ননদাই ও ভাতিজাদের বিরুদ্ধে।

গত বৃহস্পতিবার (২৬ মে) রাতে প্রবাসী স্বামীর বসত ঘরে গৃহবধুকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের পর গুরুতর আহত গৃহবধুকে চিকিৎসা না দিয়ে পাঁচঘন্টা তাদের শয়ন কক্ষে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে গৃহবধুর এলাকার চেয়ারম্যান ও স্বজনরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে রায়পুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত গৃহবধুর স্বামীর বাড়ী রায়পুর ইউপির কাজিরচর গ্রামের মল্লিক বাড়ীতে।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধু সোহাগী আক্তার দু’দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে কাতরালেও খোঁজ নেয়নি প্রবাসী স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা। এঘটনায় শুক্রবার বিকালে ৭ জনকে আসামী করে রায়পুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে আহত গৃহবধুর বাবা সিএনজি চালক মোঃ ইব্রাহিম এপ্রতিনিধিকে জানান।

শুক্রবার বিকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গৃহবধু সোহাগী জানান, ৫ বছর আগে রায়পুর ইউনিয়নের কাজিরচর গ্রামের আলী আহাম্মদ ও সহর বানুর ছেলে রাজমিস্ত্রী মোঃ রাজুর সাথে তার পরিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য সোহাগীর উপর নির্যাতন করতো স্বামী ও শাশুরীসহ পরিবারের লোকজন। মেয়ের সংসার সুখের জন্য বাবা তার সিএনজি বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার জন্য আড়াই লাখ টাকা স্বামী ও শাশুরীর হাতে তুলে দেন। কিন্তু তারপরেও আমার উপর নির্যাতন থামেনি। আমাদের ঘরে দুটি সন্তান জন্ম নিলেও তারা মারা যায়। বছর না ঘুরতেই ফের যৌতুক লোভী স্বামী ও তার পরিবারের সদ্যরা তাদের দাবীকৃত আরো দুই লাখ টাকা এনে দিতে বলেন। এনিয়ে তাদের দম্পত্য জিবনে কলহ শুরু হয়। স্বামীর দাবীকৃত যৌতুকের টাকা এনে দিতে না পারায় প্রায় সময় তাকে মারধর করা হতো।

এনিয়ে ২০২০ সালে নির্যাতিত সোহাগী বাদি হয়ে স্বামী রাজু, তার দেবর ও শাশুরীকে আসামি করে লক্ষ্মীপুর আদালতে নারী ও শিশু আইনে মামলা দায়ের করেন।

এর মধ্যেই চলতি বছরের আগষ্ট মাসে রাজু সকলের অগোচরে বিদেশ চলে যায়। তবে এ অবস্থাতেই রাজু সংসার বাঁচার জন্য সোহাগীর সাথে আবার যোগাযোগ শুরু করে। স্বামীর প্রতি সম্মান রেখে তার অনুরোধে বৃহস্পতিবার বিকালে সোহাগী তার শশুর বাড়ী যান। বাড়ীতে উঠার সঙ্গে সঙ্গে শাশুরী, ননদ, ননদাই, ভাশুরসহ পরিবারের লোকজন শারিরীক নির্যাতন করে (কুপাঘাতে মাথায় আঘাপ্রাপ্ত ও শরীরে মারাত্মক জখম) ঘরের মধে বন্ধি করে রাখে সোহাগীকে। শাশুরীসহ তার পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনে আমি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরলে তারা কোন চিকিৎসা না দিয়ে পাঁচঘন্টা যাবত শয়ন কক্ষে আবদ্ধ করে রাখেন। রাতে ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে গ্রামপুলিশ আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

ঘটনায়র পরপরই অভিযুক্ত গৃহবধু সোহাগীর ভাশুরসহ অন্যরা গা-ঢাকা দেয়ায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তার শাশুরী সহর বানু পুত্র বধুকে নির্যাতনের বিষয় অস্বীকার জানান, আমাদেরকে ফাঁসাতে এমন নাটক করেছে পুত্রবধু। এ ঘটনায় রায়পুর থানার ওসি শিপন বড়ুয়া জানান, ক্ষতিগ্রস্থ গৃহবধু মামলা দিয়েছেন। তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ওসমান গণি/বার্তাবাজার/জে আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর