আদালতে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন নুসরাতের মা

আলোচিত নুসরাত জাহান রাফিকে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার নির্দেশে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবী করেছেন তার মা শিরিন আক্তার। বুধবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে সাক্ষ্য দেন তিনি। এ সময় মামলার ১৬ আসামী আদালতে উপস্থিত ছিল। সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেলা সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সাক্ষ্য দেন শিরিন আক্তার। সাক্ষ্যপ্রদানকালে তিনি আদালতকে বলেন, গত ২৭ মার্চ সকাল ১০ টার দিকে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা কর্তৃক তার মেয়ে নুসরাত রাফির গায়ে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানির খবর শুনে প্রতিবাদ করতে তিনি মাদরাসায় যান। অধ্যক্ষের সাথে তার বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে টেবিলে থাকা বেত দিয়ে কয়েকবার বেত্রাঘাতও করেন।

খবর পেয়ে মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি রুহুল আমিন, পৌর কাউন্সিলর মোকসুদ আলম, এসআই ইকবাল হোসেন সহ কয়েকজন ছুটে আসেন। পরে শ্লীলতাহানীর ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সিরাজ আসামী হয়ে কারাগারে যায়। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তার অনুসারীদের দিয়ে ৪ এপ্রিল পরীক্ষার আগ মুহুর্তে নুসরাত রাফিকে মাদরাসার তৃতীয় তলার ছাদে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। নুসরাত রাফি মৃত্যুর আগে তার জবানবন্দিতে সব বলে গেছে। সাক্ষ্য দেয়ার সময় বারবার তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

সাক্ষ্য ও জেরা শেষে কাঠগড়ায় অচেতন হয়ে পড়েন শিরীন আক্তার। ১৫ মিনিট ধরে তার চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়া হলেও জ্ঞান না ফেরায় দ্রুত ফেনী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে নেয়া হয়। অবস্থার উন্নতি হলে বিকালে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। খবর পেয়ে হার্ট ফাউন্ডেশনে তাকে দেখতে ছুটে যান ফেনীর পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী। চিকিৎসকেরা তাকে জানান, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও ডায়াবেটিক সমস্যায় শিরীন আক্তার অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান।

পিপি হাফেজ আহাম্মদ জানান, এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।

এর আগে গত ২৭ জুন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাত রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। পরে রাফির বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও সহপাঠি নাসরিন সুলতানা, মাদরাসার পিয়ন নুরুল আমিন, নৈশপ্রহরী মো. মোস্তফা, মাদরাসার পরীক্ষা পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন, ঔষুধ বিক্রেতা জহিরুল ইসলাম সহ ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়।

গত ২৭ জুন অভিযোগ গঠনের পর পরই ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদীপক্ষের আটজন সাক্ষীকে আদালতে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য উপস্থাপন করা হয়। ২০ জুন সাক্ষ্যগ্রহণের এই আদেশ দেন আদালত। এ মামলার চার্জশিট জমা দেয়ার আগে ৭ জন সাক্ষী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে নুসরাত জাহান রাফিকে ছাদে ডেকে নিয়ে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আলোচিত এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. শাহ আলম আদালতে মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রের ১৬ আসামি হলেন মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তদন্তে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় পিবিআই অন্য ৫ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করলে আদালত তা অনুমোদন করেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর