ধসে পড়ল কলমাকান্দার নদীরক্ষা বাঁধ

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোণার কলমাকান্দায় চিকুনটুপ এলাকায় প্রায় ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সদ্যনির্মিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মহাদেও নদীরক্ষা বাঁধ ধসে পড়েছে। ২০১৮ সালে কার্যাদেশ নেওয়া এই নদী সংরক্ষণ বাঁধের কাজ এ বছর ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়। নিম্মমানের কাজ হওয়ায় নির্মাণের তিন মাসের মাথায় বাঁধটি ধসে পড়ে।

শুক্রবার (৫ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায়, মহাদেও নদীরক্ষা বাঁধে বাঁশ ও বালু বস্তা দিয়ে দায় সারাভাবে কাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে বাঁধ টেকসই না হওয়ায় নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী রংছাতী ইউনিয়নের চিকুনটুপ গ্রামের শতাধিক পরিবারের বসতঘর জমি পাহাড়ি মহাদেও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ বছর আবারও পাহাড়ি ঢলের কারণে নদী ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। এতে বিলীন হয়ে যেতে পারে বরুয়াকোনা বাজার, বিওপি ক্যাম্প, চিকুনটুপ গ্রামে ৩৫০ পরিবার বসত ঘর জমি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আতাউল হক গনি জানান, গত বছর উপজেলার সীমান্তবর্তী মহাদেও নদী পাড় চিকুনটুপ এলাকায় পাহাড়ি ঢল এর আকস্মিক ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নেত্রকোণার পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৮০ মিটার বাঁধ নির্মাণের প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করে। পরে নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদার সিডিউল অনুযায়ী কোনো কাজ করেননি বলে জানান ওই ইউপি সদস্য।

তিনি আরো বলেন, বাঁশ ও বালু বস্তা দিয়ে দায় সারাভাবে কাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। যার ফলে এ কাজ কোনো উপকারে আসেনি স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাছাড়া পাহাড়ি ঢলের কারণে ফের নদী ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। এতে বিলীন হয়ে যেতে পারে বরুয়াকোনা বাজার, বিওপি ক্যাম্প, চিকুনটুপ গ্রামে ৩৫০ পরিবার বসত ঘর জমি।

ভুক্তভোগী চিকুনটুপের বাসিন্দা আব্দুর রব হাওলাদার জানান, প্রায় ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দে প্রাক্কলন কাজ করেনি ঠিকাদার। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তদারকি করেনি। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ শেষ হওয়ার দু,মাস পর পাউবো মহাদেও নদী সংরক্ষণ বাঁধ ধসে পড়ে।

বরুয়াকোনা বাজারের ব্যবসায়ী মো. মজনু মিয়া বলেন অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ হওয়ায় সুফল পায়নি এলাকার মানুষ। তবে লাভবান হয়েছে ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অসাধু কিছু কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে রংছাতী ইউপি চেয়ারম্যান মোছাৎ তাহেরা খাতুন স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, মহাদেও নদী সংরক্ষণ বাঁধ অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পাহাড়ি ঢল থেকে বরুয়াকোনা বাজার, বিজিবি বিওপি ক্যাম্প, চিকনটুপ গ্রামের সাড়ে তিনশ পরিবারকে রক্ষা করার জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ করার দাবি জানিয়ে তদন্তপূর্বক ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট তদারকি কর্মকতাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমার এসএও সঙ্গে কথা বলেন।

তার কথা মতো উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহিমের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমি নেত্রকোনায় পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে আমি এখন কিছুই বলতে বা তথ্য দিতে পারছি না। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবো।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.জাকির হোসেন তিনি বলেন মহাদেও নদী সংরক্ষণ বাঁধ নিম্মমান কাজের স্থানীয় লোকজনের মৌখিক অভিযোগ পেয়ে ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সিডিউলে কি কি দিয়ে কাজ করার কথা, কোন দপ্তর করেছে আমার অফিসে এর কোনো কাগজ-পত্র নেই। তবে নিম্মমানের কাজ হওয়ায় চিকুনটুপ এলাকায় মহাদেও নদী সংরক্ষণ বাঁধ ধসে পড়েছে। সরেজমিনে দায় সারাভাবে মহাদেও নদী সংরক্ষণ বাঁধের কাজ করার সত্যতা পেয়েছি। ভাঙন এলাকায় জরুরিভিত্তিতে একটি স্থায়ী গাইডওয়াল নির্মাণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃকপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর