সরকারি হাসপাতালের এসি চলছে ডাক্তারের বাসায়

অনিয়মই যেন নিয়ম ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সরকারি হাসপাতালের এসি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. শিহাব উদ্দিনের (টিএইচও) বাসায় লাগানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শিহাব বলেন, ‘এটি হাসপাতালের কক্ষে অলস পড়ে ছিল, খুলে এনে বাসায় লাগিয়েছি।’ হাসপাতালে কাগজেকলমে ডাক্তার রয়েছেন ১৬ জন, দায়িত্ব পালন করেন ১০ জন। একজন ডাক্তার ২০১৬ সালে ৩ দিনের ছুটি নিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।

নিয়ম অনুযায়ী অফিস চলাকালীন সময় তিনি প্রাইভেট রোগী দেখতে পারেন না। কিন্তু ডা. শিহাব অফিস সময়ে তার কক্ষের সামনে একটি বহিরাগত যুবককে বসিয়ে রেখে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়া তিনি সরকারি বাসা বিভিন্ন কোম্পানির দুইজন প্রতিনিধির কাছে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বাসা বরাদ্দেও অনিয়ম চলছে। পিয়ন ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর পরিবারও ডাক্তারের বাসায় বিনা ভাড়ায় থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল ও বাইরের রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলো থেকে অনৈতিক সুবিধা ও কমিশন নিয়ে সরকারের দেওয়া এক্সরে, আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন চালু করছেন না চিকিৎসক- এমন অভিযোগও করেছেন রোগীরা। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সও নষ্ট।

রোগীরা অভিযোগ করেন, রোগ নির্ণয়ে বিভিন্ন পরীক্ষার প্রয়োজন না হলেও ডাক্তাররা পরীক্ষার জন্য প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে রেফার করেন। ডা. শিহাব রোগীর প্রয়োজনের বাইরে বেশ কয়েকটি প্যাথলজি পরীক্ষা দেন। তিনি প্যাডে লিখে দেন তার পছন্দের রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের নাম। রোগী তার নির্দেশিত রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে না গেলে তিনি পরীক্ষার কাগজ ছুড়ে ফেলে দেন বলেও অভিযোগ করেন উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের দিনমজুর শহীদ। অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো শিহাব উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে বলেন, ‘যতই লেখেন আমার কিছু হবে না।’

ছাগলনাইয়া উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ জন ডাক্তার রয়েছেন। একজন ডাক্তার ২০১৬ সালে ৩ দিনের ছুটি নিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এ ছাড়া ২ জন ডাক্তার ডেপুটেশনে ফেনী সদর হাসপাতালে ডিউটি করলেও বেতন-ভাতা তুলছেন ছাগলনাইয়া থেকে।

অপর একজন ডাক্তার ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। এখন হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন ১০ জন ডাক্তার। তবে তারাও যথাযথ অফিস করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকে অফিস সময় শেষ হওয়ার পরও কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেন না। অভিযুক্ত ডাক্তাররা থাকেন জেলা শহরে। অভিযোগ উঠেছে ফেনীর বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে প্র্যাকটিস করতে গিয়ে অফিসে আসতে পারেন না তারা।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর জহিরুল হক জানান, প্রধান উপসহকারী পরিবার পরিকল্পনা পদটি খালি, অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন ডা. তাসলিমা আক্তার।

ভুক্তভোগীরা জানান, বেলা ১১টায়ও কর্মস্থলে আসেন না তিনি। হাসপাতালে শূন্য রয়েছে চক্ষু, ডেন্টাল, চর্ম ও যৌন, অর্থোপেডিক, ইএনটি, সহকারী সার্জন প্যাথলজি, সহকারী সার্জন এএমসি, অ্যানেসথেটিস্টের পদ। শূন্য রয়েছে শুভপুর, ঘোপাল ইউনিয়ন সাব-সেন্টারের মেডিকেল অফিসার, মহামায়া, ছাগলনাইয়া, রাধানগর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের সহকারী সার্জন/এমও পদ। ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীর পদ ২৫টির মধ্যে খালি রয়েছে ১৫টি।

অভিযোগ রয়েছে, ১৯ জন নার্স থাকার পরও ভর্তিকৃত রোগীরা ঠিকমত সেবা পান না। নার্স না আসায় আয়া বা ঝাড়ুদাররা রোগীকে স্যালাইন খুলে দেন বা লাগিয়ে দেন।

টিকা দানকারী মোহাম্মদ উল্যা ৮ বছর ধরে হাসপাতাল কক্ষে বসে বিভিন্ন হারবাল ওষুধ বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অনেক রোগের রোগ নির্ণয়ের সুবিধা থাকলেও ছাগলনাইয়া হাসপাতালে মাত্র ৮-১০টির পরীক্ষা করানো হয়।

হাসপাতালের নানা অনিয়মের বিষয়ে ফেনী জেলা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াতুজ্জামান জানান, ডা.শিহাবের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। সরকারি হাসপাতালের এসি বাসায় লাগানোর বিষয়ে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন বলে সিভিল সার্জন জানান। দ্রুতই এক্সরে, আলট্টাসহ রোগ নির্ণয়ের মেশিনগুলো সচল করার কথা বলেন তিনি।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর