এখনও ঘাটে ফিরেনি অনেক মাছ ধরার ট্রলার, মালিক ও স্বজনদের মধ্যে আতংক

অতিপ্রবল রূপ ধারণ করে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। ফলে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে রোববার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে দেশের উপক‚লীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে।

ইতোমধ্যে সকল উপক‚ল থেকে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া সকল মাছ ধরার ট্রলারকে নিরাপদে সরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকেল থেকে সকল ধরনের নৌ-যান চলাচলেও দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। শুক্রবার রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ৮নং মহাবিপদ সংকেত জারি করা হলেও নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বেশির ভাগ ঘাটে এখনও ফিরে আসেনি অনেক মাছ ধরার ট্রলার। গভীর সমুদ্রে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় তাদের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে সংকিত হয়ে পড়েছেন ট্রলার মালিক ও মাঝি-মাল্লাদের স্বজনরা।

হাতিয়া উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ছোট-বড় মাছ ধরার প্রায় ৪০টি ঘাট রয়েছে। এসব ঘাট থেকে মাছ শিকারে নদী ও গভীর সমুদ্রে যায় প্রায় সাড়ে ৪হাজার ট্রলার। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় মোখার উৎপত্তির পর থেকে উপক‚লে জেলেদের নিরাপদে সরে আসার জন্য সরকারি ভাবে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালানোর পর অনেকগুলো ট্রলার ফিরে আসলেও অন্তত ১হাজার ট্রলার এখনো ফিরে আসেনি।

হাতিয়ার কাটাখালী, আমতলি, জঙ্গোলিয়া, মুক্তারিয়া, কাজির রাজার, বাংলাবাজার, পাইতান মার্কেট, সূর্যমূখী, রহমতবাজার ঘাট ও চেয়ারম্যান ঘাট সহ বিভিন্ন ঘাট ঘুরে জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ঘূর্ণিঝড়ের কথা জানার পরও গত ৮, ৯ ও ১০ মে বিভিন্ন ঘাট থেকে মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে যায় প্রায় ৮ থেকে ৯শত ট্রলার। যার মধ্যে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ঘাটে ফিরেছে এর অর্ধেক মাছ ধরার ট্রলার, অনেকের সাথে মোবাইলে কথা হয়েছে এবং যারা সিগনাল সম্পর্কে জানেন তারা সন্ধার মধ্যে ফিরে আসবেন। এছাড়াও অনেকগুলো ট্রলার নেটওয়ার্কে বাইরে থাকা তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।

গত বছর সিত্রাং এর সময় হাতিয়ায় দুটি মাছ ধরার বঙ্গোপসাগরের বইডুবি এলাকায় ডুবে যায়। পরবর্তীতে ওই ঘটনায় ৩ জেলের লাশ, ২১জনকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও এখনো ৮জন জেলের সন্ধার পাওয়া যায়নি। তাই ঘাটে না ফেরা ট্রলারগুলো নিয়ে আতংক বিরাজ করছে।

বুড়িরচর রহমত ঘাটের নবীর মাঝির ছেলে আফছার হোসেন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, কাল রাত থেকে বাতাশ, বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে, দুই দিন ধরে বাবার মোবাইল বন্ধ, বাড়িতে সবাই কান্নাকাটি করতেছে, এখনো কোন খোঁজ পাইনি, আমি ঘাটে বাবার জন্য অপেক্ষা করতেছি।

হাতিয়া বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবীর উদ্দিন জানান, গভীর সমুদে যে সকল বোট মাছ শিকারে গিয়েছে তার মধ্যে অনেকে চলে এসেছে। কিছু বোট এখনো আসেনি। বোট মালিক, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সহ বোট সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ওই ট্রলাগুলোর ঘাটে ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি বিকেলের মধ্যে ফিরে আসবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কায়সার খসরু বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় মোখার উৎপত্তির পর থেকে উপক‚লে জেলেদের নিরাপদে সরে আসার জন্য সরকারি ভাবে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। যে ট্রলারগুলো এখনো বাহিরে আছে সেগুলোকে ঘাটে ফিরিয়ে আনতে নৌ-পুলিশ, কোস্ট গার্ড সহ উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে।

বার্তা বাজার/জে আই

 

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর