অবৈধপথে ইতালি যাত্রা: মৃত্যুর মিছিলে রাজৈরের আরও এক যুবক
কোনোভাবেই থামছে না অবৈধ পথে ইতালি যাত্রা। বরং যতদিন যাচ্ছে ততই বেড়ে চলেছে লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার প্রবণতা। সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি দালালচক্র। এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বাংলাদেশী নিহতের ঘটনা ঘটলেও সতর্ক হতে নারাজ অতি উৎসাহি যুবকেরা। এদের মধ্যে অতি ঝুঁকিতে রয়েছে মাদারীপুরের মানুষ।
এরই ধারাবাহিকতায় ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ঘোষালকান্দি গ্রামের মোশারফ কাজীর বড় ছেলে হৃদয় কাজীর(২০) মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এসময় আহত হয়ে একই উপজেলার আরও ৪ যুবক তুরস্কে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, হৃদয় কাজী (পাসপোর্টে হৃদয় হাসান) নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার আশায় গত রমজানের আগে গোপালগঞ্জের মুকসদপুর উপজেলার চরপ্রসন্নদী গ্রামের হাকিম দালালের মাধ্যমে ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে লিবিয়ায় পৌঁছায়। পরে দালালরা তাকে আটকে রেখে অতিরিক্ত ১ লক্ষ টাকা আদায় করে। সেখান থেকে ইলিয়াস দালালের মাধ্যমে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার চুক্তিতে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা হয়। ইলিয়াসের বাড়িও মুকসদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামে।
সেই চুক্তি মোতাবেক গত ১৯ জুলাই একটি প্লাষ্টিকের বোটে মোট ৬১ জনকে নিয়ে ইতালির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় দালাল চক্র। অনেক দেশের সীমান্তে পৌঁছানোর পরও নিরাপত্তারক্ষীদের কারনে কোনোদেশেই তারা নামতে পারেনি। এভাবেই প্রচন্ড রোদের মধ্যে সাগরে অনেক সময় ভাসতে থাকায় হিট স্ট্রোকে ১৭ জন বাংলাদেশীসহ মোট ৩০ জনের মৃত্যু ঘটে।
পরে তুরস্কের কোস্টগার্ড এসে তাদের উদ্ধার করে। হৃদয়ের মরদেহ তুরস্কে আছে বলে জানিয়েছেন তার বন্ধু ও স্বজনরা। বাকিরা অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে।
একই বোটে থাকা হৃদয় শেখ জানায়, হৃদয় কাজী আমার কোলেই পানি পানি করতে করতে মারা গিয়েছে। আমিও অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন আছি। এছাড়া একই উপজেলার ছাতিয়ানবাড়ী গ্রামের সাধন বিশ্বাস, হোসেনপুর এলাকার জিন্নাত শেখ এবং শংকরদী গ্রামের সাগর সিকদারও চিকিৎসাধীন আছে।
এদিকে ছেলে মারা যাওয়ার খবরে তার বাবা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছেন। মা কোমেলা বেগম কান্নাকাটি করছেন আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। স্বজন এবং প্রতিবেশীদের কান্নায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহত হৃদয়ের কাকা মিরাজ কাজী জানান, আমার ভাতিজা ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছে। এখন আমাদের একটাই দাবি ওর মরদেহটা যেন শেষবারের মত দেখতে পারি।
আকাশ আহম্মেদ সোহেল/বার্তা বাজার/এসজে