পাবনায় হাঁড়ি চাঁদার সাঁকোয় দশ গ্রামের পারাপার

পাবনা সদর উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের কামারডাংগা-চরপাড়া এলাকায় ইছামতীর শাখা নদী বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে আশেপাশর দশ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে। শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে গেলেও, বর্ষায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বাঁশের সাঁকো। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম শুরুতে এলাকার মানুষ বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাঁড়ি-চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করে পারাপারের ব্যবস্থা করলেও, ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারে ঘটছে দূর্ঘটনা। দূর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে সেতু নির্মাণের দাবী স্থানীয়দের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের কামার ডাংগা, ঢালি পাড়া, মোল্লা পাড়া, চরপাড়া, দাসপাড়া, বেড়পাড়া, তেলীগ্রাম, মুন্সীপাড়া, ফারাদপুর, শাঁখারী পাড়ার জনগণের গ্রাম থেকে শহরে আসতে হলে ইছামতীর শাখা ছোট নদীটি পার হতে হয়।

নদীতে ব্রীজ না থাকায় এসব গ্রামের মানুষকে প্রায় ১২০ ফুট লম্বা বাঁশের সাঁকো দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। কাকডাকা ভোর হতে গভীর রাত পর্যন্ত এলাকার স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী, নারী, পুরুষ প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো ব্যবহার করে গন্তব্যস্থলে যান। নদীটির ওপারে বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বিশেষ করে দুবলিয়া হাজী জসিম উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ, ফজিতুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দুবলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডার গার্টেনের কোমলমতি শিক্ষাথীরা লেখা-পড়া করার জন্য প্রতিদিন এই সাঁকোর উপর দিয়ে তাদের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। সবচেয়ে বিপাকে পড়েন বৃদ্ধ, গর্ভবতী ও অসুস্থ্য ব্যক্তিরা। দূর্ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসসহ সকল জরুরী সেবা থেকেও বি ত এসব এলাকার মানুষ।

সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এলাকার কৃষকেরা তাদের কৃষিপণ্য নিয়ে হাটে যাবার জন্য সাঁকোর একপাশে জমায়েত হয়েছেন একে একে মাথায় ধানের বস্তা তুলে সাঁকো পার হচ্ছেন। কৃষকেরা জানান, মাঝে মাঝেই তারা পার হতে গিয়ে নদীতে পড়ে যান। এতে আহত হবার পাশাপাশি নষ্ট হয়ে যায় কৃষি পণ্য।

কামার ডাংগা গ্রামের ডা. আব্দুর রউফ বার্তা বাজারকে জানান, এই সাঁকোর উপর দিয়ে একা একাই পার হওয়া যায় না, তার উপর কৃষি ক্ষেত খামার থেকে ফসল ঘরে তুলতে ব্রীজ না থাকায় খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ে। বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে চলাচলের সময় অনেক কৃষকই পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে গিয়েছে বলে তিনি জানান।

চরপাড়া গ্রামের আলহাজ্ব আব্দুল গফুর প্রামানিক বার্তা বাজারকে জানান স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত এলাকার বাড়ি বাড়ি থেকে বাঁশ ও টাকা তুলে আমরা সাঁকো তৈরী করে আসছি। প্রতি বছর এ বাঁশের সাঁকোটি তৈরী করা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। তিনি আরও জানান আমাদের এই দুর্ভোগ দেখর কেউ নেই। নির্বাচনের সময় আসলেই বিভিন্ন প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু পরবর্তীতে ব্রীজ নির্মাণের তাদের আর খোঁজ থাকে না। সাঁকো নির্মানের জন্য অর্থ চাইলেও তাদের কাছ থেকে কোন সহযোগীতা পাওয়া যায় না।

এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস মুন্সি বার্তা বাজারকে বলেন, ব্রিজ নির্মাণের জন্য যোগাযোগ করেছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য একটু সুদৃষ্টি দিলেই ব্রিজটি নির্মাণ করা সম্ভব। স্খানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ওই স্থানের সড়কটি এলজিইডির আওতাভুক্ত নয়। সড়কটি এলজিআইয়ের। এলজিইডি এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রস্তাবনা পায়নি। তবে স্থানীয় প্রস্তাবনা পেলে এলজিইডি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর