দেন-দরবার, মামলা, ডিএনএ‘র পর দেড় বছরেও মিলেনি পিতৃপরিচয়

একটি ধর্ষণের ঘটনায় গ্রামে বহু দেন-দরবার হয়েছে। হয়েছে মামলা ও ডিএনএ পরীক্ষা। আর এর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে দেড় বছরের বেশি সময়। এদিকে ধর্ষিতার ঘরে জন্ম নেওয়া ছেলে সন্তান (১৮ মাস) ধর্ষকদের সামনেই বড় হচ্ছে নানা ধরনের অপবাদের মধ্য দিয়ে। এত কিছুর পরও শিশুটি তার পিতৃপরিচয় পায়নি। প্রতিনিয়তই নষ্টা মেয়ের অপবাদ শুনতে হচ্ছে ধর্ষিতাকেও।

এ ধরনের ঘটনা ঘটছে নান্দাইল উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের হিন্দুপাড়া গ্রামে।

স্থানীয় সূত্র ও মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে চাচার ঘরে টিভি দেখে ঘরে ফেরার সময় প্রতিবেশী চাঁন মিয়ার পুত্র মোবারক হোসেন ও আকরাম হোসেনের পুত্র রাকিব মিয়া মূখ চেপে ধরে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করে। জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী তখন ধর্ষিতা শিশুটির বয়স ছিল ১৩ বছর। ধর্ষনের কথা কাউকে না বলতে হুমকি দেওয়ায় ভয়েই সে কাউকে কিছু বলেনি। এক সময় তার শারীরিক পরিবর্তন শুরু হলে ঘটনাটি জানাজানি হয়। তখন ধর্ষিতার পরিবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মাতাব্বরদের কাছে বিচারের দাবি জানালে তাঁরা অর্থের বিনিময়ে কৌশলে কালক্ষেপন করে।

অবশেষে বাধ্য হয়েই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নান্দাইল থানায় মামলা করেন। মামলায় রাকিব ও মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। আর সালিশের নামে কালক্ষেপণ ও ধর্ষণের আলামত নষ্ট করার অভিযোগে পুলিশ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে বর্তমান ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম সহ সালিশকারী কয়েকজনকে আসামী করে।

দুই ধর্ষক দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর আদালতে হাজিরা দিয়ে বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। সালিশকারীরাও কিছুদিন কারাগারে থেকে বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। এ অবস্থায় গত বছরের ৫ মে ধর্ষিতা মেয়েটি সুস্থ সবল একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেয়।

বৃহস্পতিবার সকালে খোঁজ নিতে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় জন্ম দেওয়া শিশুটি বাড়ির উঠানে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। তখন শিশুটির মা জানায়, বাবা দিনমজুর। মা পরের বাড়িতে কাজ করেন। নিজের সন্তান নিয়ে কোন মতে বেচে আছি। ভবিষ্যতে কি হবে তা তিনি বলতে পাছেন না। নিজের সন্তানের পিতৃপরিচয়ের স্বীকৃতি না পেলেও তাঁকে প্রতিনিয়তই শুনতে হচ্ছে বিভিন্ন অপবাদের কথাবার্তা। তাঁকে যারা ধর্ষণ করেছে তারা জামিনে এসে অবাধে চলাফেরা করছে চোখের সামনে দিয়ে।

মামলাটি চতুর্থ তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে চার্জসীট দিয়েছেন নান্দাইল থানার ওসি তদন্ত আবুল হাসেম।

তিনি বলেন, আদালতে ১০ আসামির বিরুদ্ধে চুরান্ত প্রতিবেদন (চার্জসীট) দাখিল করেছেন। এর মধ্যে জন্ম নেওয়া সন্তানের ডিএনএ টেষ্ট করানো হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তদের ডিএনএ টেষ্ট হয়নি। এখন সব আদালতের বিষয়।

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর