হত্যা নয় আত্মহত্যা করেছিল শৈলকুপার গৃহবধু সোনিয়া

হত্যা নয় আত্মহত্যা করেছিল ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গোয়ালখালি গ্রামের গৃহবধু সোনিয়া। সম্প্রতি তার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এতথ্য এসেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে সোনিয়ার মৃত্যু নিয়ে চলছে গ্রাম্য রাজনীতি। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দুটি দল। স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি মৃত্যুকে হাতিয়ার করে প্রতিপক্ষকে মামলার জাল আর বিপদে ফেলতে তৎপর হয়ে উঠেছে। ঘটেছে লুটপাটের মত ঘটনা।

সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রেমের সর্ম্পকের জেরে প্রায় ১ বছর আগে শৈলকুপা উপজেলার গোয়ালখালি গ্রামের ফিরোজ হোসেনের মেয়ে সোনিয়ার বিয়ে হয় একই গ্রামের বাদশা হোসেনের ছেলে সজিবের সাথে। বিয়ের পর থেকে শ্বশুড় বাড়ির লোকজনের সাথে বনিবনা হচ্ছিল না সোনিয়ার। পাশাপাশি বাড়ি আর সোনিয়ার পরিবারের লোকজন গরীব হওয়ায় সোনিয়ার শ্বাশুড়ি মর্জিনা খাতুন মেনে নিতে পারছিলেন না বিষয়টি। তবে স্বামীর সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল সোনিয়ার। ভালবেসে বিয়ে করায় দু’জনের মাঝে সম্পর্ক ছিল খুব ভালো। দিনের পর দিন বাবার বাড়িতে যেতে না পারা, শ্বাশুড়ির খারাপ ব্যবহারের কারণে ২১ এপ্রিল ঘরের ফ্যানের সাথে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সোনিয়া। এসময় সোনিয়ার স্বামী, শ্বশুড়, শাশুড়ী বাড়ির বাইরে ছিলেন। পরিবারের লোকজন বাড়িতে এসে গলায় ফাঁস নেওয়ার বিষয়টি টের পাওয়ার পর তাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে। সেখানে প্রায় ২ ঘন্টা পর মারা যায় সোনিয়া। আত্মহত্যা করার সময় সোনিয়া একটি নোট লিখে রেখে যায়। সেখানে তার মৃত্যুর জন্য শ্বাশুড়ীকে দ্বায়ী করে। স্বামীর কাছে যেতে না দেওয়া, রান্না ভালো হলেও রাগারাগি করার, স্বামীর সাথে গল্প করলে বকা-ঝকা করাসহ নানা বিষয় নিয়ে শ্বাশুড়ী তাকে মানসিক ভাবে নির্যাতন করতো।

এ ঘটনারপর থেকে শুরু হয় প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর রাজনীতি। লাশ ময়নাতদন্তের পর শ্বশুড়বাড়ির লোকজনের নামে মামলা না দেওয়ার অভিযোগ ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। স্বামী সজিবের বাড়ি ভাংচুর লুটপাট করে একটি পক্ষ। স্বামীর বাড়ির লোকজনকে ফাঁসাতে স্বামী, শ্বশুড়, শ্বাশুড়ী ও গ্রাম্য মাতব্বরের নামে মামলা দায়ের করা হয়। এদিকে অপর পক্ষ লুটমামলা করেন আদালতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, সোনিয়া আত্মহত্যা করার দিন ফ্যান থেকে নামিয়ে প্রায় ২ ঘন্টা হাটানো হয়েছিল। যদি তাকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হতো তাহলে প্রতিবেশীরা ফ্যান থেকে নামিয়ে জীবিত অবস্থায় কিভাবে পেল। তিনি আরও বলেন, শ্বাশুড়ি, শ্বশুড়, স্বামী খারাপ ব্যবহার করতো বলে সোনিয়া নোট লিখে গেছেন। এতে এটাই তো প্রমানিত হয় সোনিয়া আত্মহত্যা করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ সোনিয়ার মৃত্যুর ঘটনাকে পুঁজি করে গ্রামের একটি পক্ষ অন্যপক্ষকে ফাঁসাতে ব্যস্ত। সজিবের বাড়ির মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে অপর পক্ষ। গ্রামের মাতব্বরকে ফাঁসাতে তার নামে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এসব বিষয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুনজর দেওয়া উচিত।

এ ব্যাপারে শৈলকুপা থানার ওসি কাজী আয়ুবুর রহমান বলেন, সোনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় ওই সময় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। তার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসেছে। এতে সোনিয়া আত্মহত্যা করেছিল বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর