নানা আয়োজনে স্মরণ করা হলো ভাওয়াইয়া যুবরাজকে

চৈত্র সংক্রান্তিতে গোটা দেশ যখন বর্ষ বরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক সে দিনই ব্যতিক্রমী এক আয়োজনে ১৪২৫ বঙ্গাব্দকে বিদায় দিলো কুড়িগ্রামের কিছু তরুণ। ‘ভাওয়াইয়ার পথে প্রান্তরে’ শিরোনামে এক ব্যতিক্রমী আয়োজনে উত্তরা লের ‘ভাওয়াইয়া যুবরাজ’ খ্যাত কছিম উদ্দীনকে স্মরণ করলো কুড়িগ্রামবাসী। গতকাল শনিবার বিকেলে কুড়িগ্রাম পৌর টাউন হলে শুরু হওয়া এ আয়োজন চলে রাত ১০ টা পর্যন্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফ্রেন্ডস এ্যাসোসিয়েশন (ডিইউএফএ)’র সহযোগীতায় আয়োজিন এ অনুষ্ঠানে ভাওয়াইয়া গান এবং ভাওয়াইয়া গানে কছিম উদ্দীনের ভূমিকা, তার জীবন যাপন সহ ভাওয়াইয়া গান গেয়ে মুক্তিযুদ্ধে এ শিল্পীর অবদান নিয়ে আলোচনা করা হয়।

কছিম উদ্দীনের জ্যেষ্ঠ পুত্র গোলজার হোসেন ছাড়াও উত্তরা লের জনপ্রিয় এ ভাওয়াইয়া শিল্পীকে নিয়ে আলোচনা করেন ভাওয়াইয়া শিল্পী গোলাম মোস্তফা বাবলু, নাজমুল হূদা, শাহ আলম খন্দকার, সুজিতা রায়, ভূপতি ভূষণ বর্মা, জগৎপতি বর্মা, জীবন চন্দ্র পাল সহ উত্তরা লের ভাওয়াইয়া প্রেমি ও শিল্পীরা। স্বাগত বক্তব্যের পর সদ্য প্রয়াত ভাওয়াইয়া শিল্পী ও বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিউল আলম রাজার স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর ঢোল, দোতারা, বাাঁশি আর বেহালার তালে ভাওয়াইয়ার মূর্ছনায় মুখরিত হয়ে ওঠে হল রুম। দর্শকদের করতালির মধ্য দিয়ে একে একে ভাওয়াইয়া যুবরাজ কছিম উদ্দীনের লেখা গান গেয়ে চলেন এ অ লের ভাওয়াইয়া শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন কিছু সময়ের জন্য উপস্থিত হয়ে ভাওয়াইয়া গান উপভোগ করেন।

উল্লেখ্য, কছিম উদ্দিন ছিলেন বাংলাদেশের উত্তরা লে প্রচলিত ভাওয়াইয়া গানের একজন অন্যতম প্রধান শিল্পী। যিনি ভাওয়াইয়াকে নিয়ে গেছেন অন্যন্য উচ্চতায় তিনি কছিম উদ্দিন। অকৃত্রিম আ লিক এ শিল্পীকে ‘ভাওয়াইয়া গানের যুবরাজ’ বলে সম্বোধন করা হয়। শিল্পী কছিম উদ্দিন মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন ক্যাম্পে ভাওয়াইয়া গান গেয়ে সাধারণ জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে ভাওয়াইয়া গানের পাশাপাশি পালাগানও পরিবেশন করতেন। দারিদ্রের কষাঘাতে জীবন যাপন করলেও জীবদ্দশায় শিল্পী কছিম উদ্দিন ২সহস্রাধিক গান রচনা করেছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে, ‘ওকি বাপরে বাপ মুক্তিফৌজ কি যুদ্ধ করে বাপরে’, ‘নয়া ডারাতে মাছ উজাইছে, হেঙ্গা পাতেয়া দে’, ‘বাপের বাড়ি মোর ধরলার ওপারে’, ‘বৈদেশিয়া পিরিত রে, ভাঙিলে পিরিতি আর না লাগিবে জোরা রে’, ‘কইন্যা ভাবনা করিস কি, পাটা বেচেয়া কিনিয়া দেইম তোক ফুল তোলা শাড়ি’ প্রভৃতি। ১৯৯২ সালের ২২ আগস্ট গুণী এ শিল্পীর মৃত্যু হয়।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর