মধুমতি নদী গর্ভে গুচ্ছগ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর

তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি আজও। ভোটের আগে তারা ফ্যাক্টর হলেও পরে তারা মূল্যহীন এক ভিন্ন জগতের বাসিন্দা বলেই বিবেচিত হয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য নানা রোগ-শোক আর হাজারো সমস্যায় নিমজ্জিত মানুষগুলোর খবর রাখে না কেউই।

সরকারী উদ্যোগে ২০০৪ সালে ১২০টি অসহায় ছিন্নমূল পরিবারের স্থায়ী আবাসনের লক্ষ্যে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্ধ ইউনিয়নের চাপুলিয়া গ্রামে মধুমতি নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে তোলা হয় গুচ্ছগ্রাম এবং গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আশ্রয়ন প্রকল্পের অধীনে ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে এর পাশেই ১৫০টি পরিবারের আবাসনের জন্য নির্মাণ করা হয় আশ্রায়ণ।

গুচ্ছগ্রামে শত শত পরিবারের মাঝে তৈরি ঘর হস্তান্তরের পর এখানকার বাসিন্দারা গ্রামটিকে তিলে তিলে গড়ে তোলেন।টগরবন্ধ ইউনিয়নের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া মধুমতি নদীর পাড়ে সারি সারি সবুজ বৃক্ষ রাজি আর সুন্দর গোছানো টিনের ঘর চাপুলিয়া গুচ্ছগ্রাম অল্প দিনেই স্থানীয় মানুষের মাঝে ভিন্নতা এনে দেয়।

নয়নাভিরাম গুচ্ছগ্রামে স্থায়ী আবাসন পেয়ে বসতিদের মনে আনন্দের কোন কমতি ছিল না।বাঁচার স্বপ্নে বিভোর ছিন্নমূল মানুষগুলো এখানে বসবাসের পাশাপাশি অল্প দিনেই পরিশ্রম করে গবাদি পশুসহ আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করে।সব মিলিয়ে ভালই কাটছিল এখানকার বসতিদের দিনকাল।

কিন্তু হঠাৎ বসতিদের সুখের সংসারে বাদ সাধে সর্বনাশা মধুমতি নদী। মধুমতি তার আপন গতিপথ পরিবর্তন করে প্রলয়ংকরী রূপ নিয়ে তার গতিবেগ একে একে ভাংতে থাকে বাড়ি-ঘর ও ফসলী জমি।কিছু দিনের ব্যবধানে মধুমতি আঘাত হানে গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয় প্রকল্পে।কয়েক বছরের ভাঙনে মধুমতির নদী গর্ভে চলে গেছে প্রকল্পের বাসিন্দাদের প্রায় শতাধিক ঘর।প্রায় ৩ বছর ধরে চোখের সামনে মধুমতি অব্যাহত ভাঙনে নদী গর্ভে প্রায় শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি চলে যাওয়ার সাথে সাথে বাঁচার স্বপ্ন হারিয়েছে মানুষগুলো।

নদী ভাঙনে বসতিদের শেষ সম্বল ভিটে মাটি বাঁচাতে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ বিভিন্ন দফতরে কাকুতি-মিনতি ও আবদেন করেও কোন সুফল মেলেনি তাদের ভাগ্যে।অসহায় মানুষগুলো শেষ সম্বল বাঁচানোর কাকুতি-মিনতি কারো কানে ঢোকেনি।মধুমতি নদীর ভাঙনে শতাধিক পরিবার ঘর-বাড়ি হারিয়ে আবার ভূমিহীন ছিন্নমূল মানুষে পরিণত হয়ে সরকারি রাস্তা আর নদীর পাড়ে ঝুপড়ি তুলে সন্তান-সন্তাদি নিয়ে অসহায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে দীর্ঘদিন ধরে।

এরপরও থেমে নেই মধুমতির ভাঙন।গুচ্ছগ্রামের নদী ভাঙন থেকে বেঁচে যাওয়া বাকি পরিবারকে গ্রাস করে চলছে মধুমতি।ভাঙনে ভাঙনে বাকী বসতিদের বসতঘরের ভিতরে চলে এসেছে নদী।অন্য কোথাও যাবার জায়গা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে এসকল অসহায় মানুষগুলো।

সরেজমিনে গুচ্ছগ্রামে নদী ভাঙনের ছবি তুলতে গেলে দেখা মেলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের।মধুমতির ভাঙন সীমার ৩ গজ পাশেই ঝুপড়ির মধ্য থেকে কথার শব্দ শুনে বেরিয়ে আসে ৬০ ঊর্ধ্ব অন্ধ ভিক্ষুক রুমেসা বেগম।সাংবাদিক জেনে এগিয়ে এসে হাউমাউ করে ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি। বসতিদের আশ্বাসের পর কান্না থামিয়ে রুমেসা বেগম জানালেন তার দুঃখের কথা।ভূমিহীন রুমেসা বেগম জন্মের পর থেকে তার চোখ অন্ধ হওয়ায় খেতে হয় ভিক্ষা করে। পরিবার নিয়ে গুচ্ছগ্রামেই জীবন-যাপন করছিলেন তিনি।কিন্তু মধুমতি নদী ভাঙনে তার ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে চলে যাওয়ার পর থেকে সন্তানদের নিয়ে অন্যত্র চলে গেলেও বাড়ির শোকে নদীপাড়ে ঝুপড়ি তুলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে সে।

এদিকে বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর তীব্র স্রোতে নতুনভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে।ফলে ঘর-বাড়ি হারানোর আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে বসতিরা।

খুব দ্রুত স্থানী বাঁধ নির্মাণ করা না হলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই গুচ্ছগ্রামটির সম্পূর্ণ অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে এমনটি মনে করছেন তারা।

এবিষয়ে টগরবন্ধ ইউপি চেয়ারম্যান ইমাম হাচান (শিপন) বার্তা বাজারকে বলেন, “গুচ্ছগ্রামের অধিকাংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।বিষয়টি আমরা বার বার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট অবগত করেছি।”

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আলফাডাঙ্গা উপজেলা শাখার কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার বার্তা বাজারকে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রতিবেদন দাখিল করেছি।আশা করি খুব শিঘ্রই এর স্থায়ী সমাধান হবে।”

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর