সাম্প্রতিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ২০১৮ সালের এক সুত্রমতে, দেশে পথশিশুর সংখ্যা ১১ লক্ষ। যার অর্ধেকরই বেশি বাসবাস করে রাজধানী ঢাকায়। এদের পিতা মাতা কে? তার কোনো উত্তর নেই তাদের কাছে। পার্ক, ফুটপাত কিংবা বিভিন্ন স্টেশনে মানবেতর জীবনযাপন করে তারা। সরকারি এবং বে-সরকারিভাবে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রকল্পই আলোর মুখ দেখেনি।
রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে দেখা হয় তরিকুল ইসলামের সাথে । বয়স সর্বোচ্চ ১০ ছুই ছুই। পড়নের জামা ছেড়া। আমাদের দেখে কাছে এসে কিছু খাওয়ার জন্য ১০ টাকা চাইলো। প্রতিউত্তরে অনেক কথা হয় তার সাথে। এক পর্যায়ে তুলে ধরে তার জীবন যুদ্ধের গল্প। বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার গচিয়াহাটার সহশ্রাম নামক এলাকায়। দুই ভাইয়ের মাঝে ছোট সে। বাবা আরেকটি বিয়ে করায় ও মায়ের আরেক যায়গায় বিয়ে হওয়ায় সে কারও কাছে ঠাঁই পায়নি।
৬ বছর বয়সে তাদের ছেড়ে ট্রেণে ওঠে পারি জমায় রাজধানী ঢাকায়। উদ্ভাস্তুর মতো চলতে থাকে তার দিনকাল। কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে মানুষের বেগ ও বস্তা টেনে, তাদের কাছে চেয়ে-চুটে যেই টাকা পায় তাই দিয়ে খেয়ে-পুড়ে দিন পার করে তার।
তারিকুল জানায়, “বাবা আরেকটা বিয়ে করছে, আর আম্মারও (মা) আরেক জায়গায় বিয়ে হইছে, তাই আমাকে আর দেখে না। বড় ভাই আছে বিয়ে করেছে।
মা বাবাকে দেখতে কিছুদিন আগে বাড়িতে গেছিলাম। কিন্তু কাউকে পাইনি। ভাইয়ের কাছে থাকতে চাইছিলাম। তখন ভাবি ভাইকে বলে “ভাই চাও নাকী আমাকে চাও?” ভাই বলল, ভাইও,বউও…। তারপর ভাবী বলে, তুমি তোমার ভাই নিয়ে থাকো, আমি যাই। তারপর রাগ করে ভাবী তার বাপের বাড়ি চলে যায়। তখন ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে বলে, “ভাই আমি তোকে রাখতে পারবো না,তুই কোথাও চলে যা”।
বার্তা বাজার- বাবা-মা কে কাছে পেলে কী বলবে ?
বলবো “তুমরা আমারে (আমাকে) ফালায়া থইয়া (রেখে) গেছোগা (চলে গেছো) , ভাই দেখে না, ভাই বউও দেখেনা, কেউ দেখেনা, এরজন্য ঢাহা (ঢাকা) এসে ভিক্ষা করি, মানুষের মাল টেনে ভাত খাই, কত কষ্ট করি… কেনো এমন করলে?
বার্তা বাজার- সারাদিনে কতো টাকা পাও ভিক্ষা করে বা মালামাল টেনে এবং কি খাওয়া দাওয়া করো সারাদিন?
-“ সারাদিনে ৭০ টাকা থেকে ১০০ টাকা কামাইতে (ইনকাম) করতে পারি। প্রতিদিন সকালে একটা বন রুটি (১০ টাকা) দিয়েই চলে । আর দুপুরে ৩০/৪০ টাকার ভাত খাই। পরে এইখান থেকে কমলাপুর চলে যাই। ওইখানে গিয়ে টেহা-টুহা (টাকা) জমিয়ে হোটেলে গিয়ে খাই। পরে স্টেশনেই ঘুমাই”।
বার্তা বাজার- তুমার ইচ্ছা কী ?
“আমার পরিবারের মা বাবা ও ভাই ভাবীকে আমি কাছে পাই” “লেখাপড়া করতে চাই” ও “সুন্দর ও পরিষ্কার জামা কাপড় পড়তে চাই” “আমারও ইচ্ছে লেখাপড়া করে একটা চাকুরি করে সবাইকে কাপড়চোপড়, খাওয়া দাওয়া সব দিবো”
এই তারিকুলের মতো আরও শতাধীক শিশুর দেখা এই বিমানবন্দর রেলস্টেশনে। তাদের এই পথে আসার পিছনে রয়েছে অনেক দুর্বিঃসহ গল্প। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের একটি বিরাট অংশজুরে আছে তরিকুলরা। তাদের বাদ দিয়ে উন্নয়নের কথা চিন্তাও করা যায় না। শুধু সরকার, প্রশাসন কিংবা সংস্থাই নয়, আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু দায়বদ্ধতা আছে বলে মনে করেন পথশিশুরা।
ভিডিওসহ….
পথশিশু তারিকুলের তিনটি ইচ্ছে___এমন হাজার ও গল্প আছে আপনার আশেপাশে।সেসব গল্প জানিয়ে দিতে পারেন আমাদের।নির্বাচিত গল্পগুলো আমরা প্রতি সপ্তাহে তুলে ধরবো।
Gepostet von Barta Bazar am Dienstag, 10. September 2019
বার্তা বাজার/এস.আর