মাদারীপুর জেলা আ.লীগের সভাপতিকে বহিস্কারের দাবিতে উত্তাল

সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী, বর্তমান আ.লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের এমপি শাজাহান খানের মরহুম পিতা মৌলভী আসমত আলী খানকে নিয়ে কটুক্তি করায় মাদারীপুরে দফায় দফায় প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রয়েছে।

মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মোল্লাকে পদ থেকে বহিস্কারের দাবীতে সদর ও রাজৈর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এসব সভার আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা ও আ.লীগসহ অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের একাংশ।আসমত আলী খান মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সংগঠক, মাদারীপুর জেলা আ.লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ফরিদপুর জেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে শাজাহান খানের বাবাসহ তার সরকার কর্তৃক প্রদত্ত স্বাধীনতা পদক সম্পর্কে কটুক্তি করেছে শাহাবুদ্দিন মোল্লা।

এরই সূত্র ধরে উপজেলার বিভিন্নস্থানে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় পিতার মুক্তিযুদ্ধকালিন ভূমিকার বর্ণনা দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাজাহান খান বলেন, ১৯৪৯ সালে আ.লীগ গঠনের সময় বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা আ.লীগের বঙ্গবন্ধুর পরেই ছিলেন আসমত আলী খান। ১৯৫৩ সালে আবার আ.লীগের প্রথম কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

এরপর ১৯৫৪, ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৬২-১৯৬৩ তে ফরিদপুর জেলা আ.লীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচালনা করার জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব হিসেবে এখানে নিয়োজিত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ভারত পালিয়ে যান নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হেমায়েত বাহিনী ও খলিল বাহিনীর উপদেষ্টা হিসেবে তিনি তাদের পরিচালনা করেছেন। এমনকি তিনি ১৯৪৯-১৯৮৬ সাল পর্যন্ত মাদারীপুর জেলা আ.লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি থেকে শুরু করে কখনো সভাপতি আবার কখনো সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের পরিবারে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। এবং রাজনৈতিক বয়স একশত বছর পাড় করেছে। কিন্তু যারা আমার বিরুদ্ধে স্বরযন্ত্র করে তাদের পরিবারে একজনও মুক্তিযোদ্ধা নেই। কারন যুদ্ধের সময় তারা কেউ দেশে ছিলেন না, পালিয়ে গিয়েছিলেন ভারতে।

শাহাবুদ্দিন মোল্লার উদ্দেশ্যে শাজাহান খান বলেন, আপনি এক টার্ম সভাপতি হয়ে ৩৭ বছর মাদারীপুর জেলা আ.লীগের নেতৃত্ব দেয়া লোকটার বিরুদ্ধে কথা বলে অন্যায় করেছেন। আপনি বলেছেন, আমার বাবার স্বাধীনতা পদক নাকি আমি এনে দিয়েছি! কিন্তু না, এ পদক রাষ্ট্র থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি দিয়েছেন।

এমনকি আমার বাবা যুদ্ধে গিয়েছিলো কিনা প্রশ্ন তুলে তাকে কটুক্তি করেছেন। আপনি রাজাকারের সন্তানদের নিয়ে জেলা আ.লীগের কমিটি গঠন করেছেন এবং আপনার আপন এক ভাগিনা রাজৈর উপজেলা জামাতশিবিরের আমির আর আমাকে বলছেন আমি নাকি বিএনপি, জামাত ও রাজাকারদের পূর্নবাসিত করেছি।

যখন ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে নির্বাচিত সরকার শেখ হাসিনাকে উৎখাত করতে চাইলো, তখন আপনারা তো রাস্তায় নামেন নি, নেমেছিলাম আমি। আপনি রাজাকারের সন্তানদের নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করে বিএনপি-জামাত শিবির ও রাজাকারদের পূর্নবাসিত করেছেন, আমি করি নাই।

তিনি মাদারীপুর জেলা আ.লীগের সভাপতির উদ্দেশ্যে আরো বলেন, ক্ষমতা, সম্পদ, অর্থের প্রতি আমার গুরুত্ব নেই, আমার মহা গুরুত্ব মানুষের ভালবাসার প্রতি।

আগামীতে বেচে থাকলে আমার এলাকার জনগণের জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করবো। কিন্তু এই সইরাচার, সন্ত্রসী, বেয়াদবদের কাছে মাথা নোয়াবো না। আমরা এই সন্ত্রাস, বেয়াদব ও জনবিচ্ছিন্ন লোকের হাত থেকে আ.লীগকে মুক্ত করে জনপ্রিয়দের আ.লীগ নেতা নির্বাচিত করতে চাই। তার জন্য শুধু মাদারীপুরেই নয় সারাদেশে দাবি উঠেছে। যতদিন পর্যন্ত এর বিচার না হবে এবং তাকে বহিস্কার করা না হবে, ততদিন এ অন্দোলন শান্ত হবে না।

আকাশ আহম্মেদ সোহেল/বার্তা বজার/টি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর