গ্রাহক পর্যায়ে বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম

পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের প্রস্তাবের পর এখন বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে শুরু করেছে। পাইকারির সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহক পর্যায়েও বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম।

এরই মধ্যে দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে বিদ্যুৎ বিতরণকারী নর্দান ইলেকট্রিক পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকা) তাদের বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোও চলতি সপ্তাহের মধ্যেই প্রস্তাব দেবে বলে জানা গেছে।

ঢাকার দুই বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ডেসকো ও ডিপিডিসিও জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে তারাও তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের লাভ-লোকসানের হিসাব দিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব দেবে। একই কথা বলছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিও (ওজোপাডিকো)।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল।
সম্প্রতি পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। কমিশনকে দেওয়া এক চিঠিতে তারা জানিয়েছে, ২০২০ সালে বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবির আয় হতে পারে ৩৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু ওই সময় প্রয়োজন হবে ৪৫ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। ফলে বাকি ৮ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা তাদের ঘাটতি হবে।

পিডিবি জানায়, এখন কমিশন দাম বাড়াবে নাকি ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলবে, সেটা তারাই ঠিক করবে। পাইকারি বিদ্যুতের পাশাপাশি তারা চলতি সপ্তাহেই গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেবে বলেও কমিশনকে জানিয়েছে তারা। এর ধারাবাহিকতায় অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেবে বলে জানিয়েছেন কোম্পানি প্রধানরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেসকোর (ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহিদ সারওয়ার বলেন, ‘পিডিবি যেহেতু পাইকারি বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, আমরাও এই সপ্তাহের মধ্যে বিইআরসির কাছে চিঠি দেবো।’ তিনি বলেন, যদি পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ে তাহলে তাদের কী পরিমাণ লোকসান হবে, এখন তাদের আয় ও ব্যয় কীভাবে হচ্ছে সেসব জানিয়ে কমিশনকে চিঠি দেওয়া হবে।

অন্যদিকে ডিপিডিসির (ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, তাদের কোম্পানিও বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব দেবে। এক্ষেত্রে পাইকারি দাম বাড়ানোর হারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পাইকারি যে হারে বাড়াবে আমাদেরও সেই হারে বাড়াতে হবে।’

নেসকো এরই মধ্যে তাদের বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কমিশনে জমা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, তাদের কোম্পানি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কমিশনে জমা দিয়েছে। তবে এবার নির্দিষ্ট কোনও হারে দাম বাড়ানোর আবেদন তারা করেনি।
কোম্পানিটির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পাইকারি বিদ্যুতের দাম না বাড়ালে গ্রাহক পর্যায়ে তাদের দাম বাড়ানোরও প্রয়োজন নেই। তবে পাইকারি বিদ্যুতের দাম যে হারে বাড়ানো হবে ওই হারে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করেছে নেসকো।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শফিক উদ্দিন বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিক্রিতে আগামী বছর যে ঘাটতি সৃষ্টি হবে তা উল্লেখ করে আমরা বিইআরসি’র কাছে দাম সমন্বয়ের আবেদন করবো।’ তিনি জানান, ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এ আবেদন করা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন গড়ে ইউনিটপ্রতি ৩৫ পয়সা দাম বাড়ানো হয়, যা ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। সে সময় পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি। আর ২০১৫ সালে সর্বশেষ পাইকারি বিদ্যুতের দাম ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ বাড়ানো হয়।

বার্তাবাজার/ডব্লিওএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর