চোখের সামনে পুড়ে ছাই বই-খাতা আর শখের টিয়া পাখি

পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ুয়া রিফাত। বাবা মায়ের ২য় সন্তান। পড়াশুনা করে মিরপুরের মাতৃছায়া স্কুলে। যখন সে এবারের পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক তখনই নেমে এলো তার ও তার পরিবারের কালো অন্ধকার। শুক্রবার বিকেলটায় তাদের সবছিলো কিন্তু শনিবার বিকেলে তারা নিঃস্ব।

আজ দুপুর ২ টার দিকে মিরপুরের ৭ নম্বরের সেই ঝিলপাড় বস্তিতে গিয়ে দেখা যায় মানুষের আহাজারি আর তিলে তিলে মাথাগুজার ঠাঁই তোলা ঘর ও ঘরের আসবাবপত্র,হাড়ি পাতিলসহ কেউ কিছুই বের করতে পারেনি। না খেয়ে দিন পার করছে বস্তিবাসী ।

কিছু দূর হাটার পর দেখা যায় রিফাতের চোখের পানি ঝড়ছে ও তাদের ঘরের পোড়া টিন সরিয়ে বই,কাপড় ও প্রিয় টিয়াপাখি টাকে খুজছে। একপর্যায়ে খাঁচা টা পাওয়া গেলেও ভিতরের টিয়া পাখিটা আর জীবিত পাওয়া যায়নি।

পোষা টিয়া পাখির খাচা ধ্বংসস্থুপ থেকে টেনে বের করার চেষ্টা করছে রিফাত। -বার্তা বাজার।

বার্তা বাজারের সঙ্গে কথা হয় রিফাতের। সে জানায়, আগুনের সুত্রপাত ঘটলে তার মা ও বাবা তাদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আগুনের কাছে হেরে গিয়ে তার মা ও বাবাও দৌড়ে আত্মরক্ষা করে। সে এবার পিএসসি পরীক্ষা দিবে। কিন্তু কোনো বই খাতা, পোশাক এমনকি তার প্রিয় একটি পোষা টিয়া পাখিও ঘর থেকে বের করতে পারেনি।

রিফাতের বাবা ওমর ফারুখ জানান, “আমি রিও ফ্যাশনে কাজ করে অনেক কষ্টে এই ঘরটা বানাইছিলাম। আর ছেলেকে লেখাপড়া করাই। আজ সব শেষ। আমার ছেলের কোনো বই খাতা,কাপড়, হাড়ি-পাতিল কিছুই বের করতে পারিনি। রাত থেকে রাস্তায় কাটাচ্ছি। এখন পর্যন্ত খাবারের কোনো কিছু ব্যাবস্থা করতে পানিনি। আমরা কই থাকবো? আমার তিলে তিলে গড়া সব কয়েক ঘন্টায় শেষ”

বাবা ওমর ফারুখের সাথে রিফাত। -বার্তা বাজার।

মিরপুর-৭ নম্বর সেকশনের ঝিলপাড় বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচশ থেকে ছয়শ ঘর পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মোট পরিবারের সংখ্যা প্রায় তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে।

ঠিক মতো কথা বলতে পারেও না শিশুটি। সে শুধু বোঝেছে, আজ সব শেষ। -বার্তা বাজার।

আজ সকালে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম সাংবাদিকদের মিরপুর-৭ চলন্তিকা মোড়ের পাশে ঝিলপাড় বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে এ তথ্য জানান।

বার্তাবাজার/এসআর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর