স্বপ্ন সত্যি হলে ‘খারাপ’ লাগে?

অপেক্ষায় দাঁড়ি টেনে স্বপ্ন ছুঁলো বাংলাদেশ। রইলো না ‘এপার-ওপার’ বলতে আর কোন শব্দ। এখন চাইলেই যে কোন সময় যাওয়া যাবে বাড়ি, যাওয়া যাবে কাঙ্খিত গন্তব্যেও। থাকবে না ফেরি পারাপারের চিরায়ত বিড়ম্বনা। দক্ষিণাঞ্চলবাসীর কাছে এ যেন এক ঈদ আনন্দ। সেটাও আবার ঈদের আগেই। এই উচ্ছ্বাস, এই প্রাপ্তি যার জন্য, সেই ‘হার না মানা’ মানুষটির জন্য হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা। আমৃত্যু কৃতজ্ঞতা। শুধু আমার নয়, পুরো দেশবাসীর।

‘হবে না, হবে না’ বলে যারা এতোদিন সেতুর বিরোধিতা করছিলেন, তারা আজ চুপ কেন? বরফ ঘুমে গেছেন? পদ্মা সেতু কারও ব্যক্তিগত সম্পদ নয়, এই সেতু আমার-আপনার অর্থেই নির্মিত। এই সেতু বাংলাদেশের। ১৮ কোটি মানুষের।

পরীক্ষা ছিল অনেক। তবে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেদ করেছিলেন, স্পর্ধা দেখিয়েছিলেন, বলেছিলেন সেতু হবেই। হয়েছেও। তাও আবার নিজস্ব অর্থায়নে। ত্যাগ-সাহস-নির্মাণে এভাবে নিজেদের সক্ষমতা জানান দেয়ায়, চারদিকে কেবল প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, ‘বাংলাদেশ পারে, বাংলাদেশই পারবে’।

একাত্তরে ‘হার না মানা’ জাতি বলেই এই অসম্ভবকে আমরা সম্ভব করেছি। এখন আর ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্সে কোন যাত্রীকে থাকতে হবে না রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায়, সবজি-মাছ ব্যবসায়ীরও হবে না ক্ষতি, সময় মতো ইন্টারভিউ দিতে যেতে পারবে চাকরিপ্রার্থীরাও।

কাজ করলে বিতর্ক থাকবে, সমালোচনা থাকবে। পাছে লোকে কিছু বলবে। এটাই স্বাভাবিক। পদ্মা সেতু নিয়েও ছিল। কিন্তু সেসবে কর্ণপাত না করে, কথিত ঐতিহ্যকে গুরুত্ব না দিয়ে কীর্তিনাশা পদ্মার বুকে হয়েছে অনন্য কীর্তিগাথা স্থাপন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের এই সেতুটি এখন আমাদের জয়ের প্রতীক। আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। প্রতীক অহংকারেরও।

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ নয়, একজন নাগরিক হিসেবে বলছি, আপনাকে সহস্র অভিনন্দন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনার জন্যই সকল ষড়যন্ত্রের জবাব দিয়ে আমরা জিতেছি, জিতেছে লাল-সবুজের বাংলাদেশ। তাইতো সগর্বে-সহাস্যে বলছি, ও পৃথিবী… এবার এসে বাংলাদেশ নাও চিনে…।

আর হ্যাঁ, আরেকটা কথা। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’র যুগ কিন্তু শেষ হলো। অবসান হলো ফেরি পারাপার যুগেরও। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আপনি-আমি হয়ে গেলাম ‘পদ্মার উপর গাড়ি চালানো’ যুগের মানুষ।

৭ থেকে ৮ মিনিটেই পার হওয়া যাবে প্রমত্ত পদ্মা, ভাবা যায়? পরবর্তী প্রজন্মও এই সুবিধা ভোগ করুক। হাসিতে বাঁচুক, খুশিতে বাঁচুক। ‘মা আমি আসছি’ বলে বারবার, হাজারবার ফিরে যাক জননীর কোলে, পরিবারের ছায়ায়।

মুহুর্তগুলো হয়ে উঠুক আরও রঙিন, আরও সুন্দর।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী, গীতিকার ও নির্মাতা

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর