মুশফিক-সালাহদের সঙ্গে যেখানে দারুণ মিল

চার বছর পর মাঠে গড়িয়েছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। ঠিক একই সময় পবিত্র মাহে রমাদান। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা খেলোয়াড় ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে বেশ মনোযোগী। তবে রোজা রাখলে হয়তো নিজের শতভাগ মাঠে নাও নিংড়ে দিতে পারেন, দলের প্রতি আত্মনিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে দেখে দলের অনেকেই রোজা রাখতে পারেন না। কিন্তু মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ ও মিরাজ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। যত যা-ই হোক, রোজা তারা রাখবেনই! এ দিকে মুশফিকদের সঙ্গে মিলে গেছেন মোহাম্মদ সালাহরাও। গতকাল চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে খেলা লিভারপুল ও টটেনহামের বেশ কিছু মুসলমান খেলোয়াড় রোজা রেখে খেলতে নেমেছিলেন।

চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল খেলতে নিজ নিজ মূল একাদশের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন লিভারপুলের মিসরীয় ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ ও সেনেগালিজ ফরোয়ার্ড সাদিও মানে। সুইস মিডফিল্ডার জের্দান শাকিরিকে মাঠে নামানো না হলেও, তিনিও রোজা রেখেছিলেন। ওদিকে টটেনহামের মূল একাদশের অংশ হিসেবে মাঠে ছিলেন ফরাসি মিডফিল্ডার মুসা সিসোকো। রোজা ছিলেন তিনিও। ম্যাচের ৪০ মিনিটের মাথায় তাদের দেখা যায় ক্ষণিকের জন্য টাচলাইনে এসে পানি খেয়ে রোজা ভাঙতে।

ম্যাচের প্রথম মিনিটেই সাদিও মানে টটেনহামের বক্সে একটা পেনাল্টি আদায় করে নেন, সেখান থেকে গোল করেন মোহাম্মদ সালাহ। শেষে লিভারপুল আরেকটি গোল করে ষষ্ঠবারের মতো ইউরোপ-সেরা হওয়ার কৃতিত্ব গড়ে। খেলোয়াড়দের রোজা রাখা, ধর্মচর্চা নিয়ে লিভারপুলের কোচ ইউর্গেন ক্লপ বরাবরই শিথিল। খেলোয়াড়দের রোজা রাখা নিয়ে কিছুদিন আগে তিনি বলেছিলেন, ‘খেলোয়াড়দের রোজা রাখা নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি তাদের ধর্মকে শ্রদ্ধা করি। কিছু কিছুদিন আসে যখন সালাহ আর মানে একটু দেরি করে ড্রেসিংরুমে আসে কেননা তারা প্রার্থনা করছিল। আমি তাতে কিছু মনে করি না। পৃথিবীতে ফুটবলের চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছে।’

ওদিকে বাংলাদেশও ওই দিন তাদের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছে জয় দিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে তারা। রোজা ছিলেন মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও মিরাজ। বাংলাদেশের জয়ে তিনজনের ভূমিকাই ছিল অনস্বীকার্য। দুর্দান্ত একটা সূচনার পর দ্রুত দুই ওপেনারের উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন একটু ব্যাকফুটে, তখনই সাকিবের সঙ্গে বাংলাদেশের ইনিংসের হাল ধরেন মুশফিক। ৮০ বলে ৭৮ রানের একটা ঝকঝকে ইনিংস খেলেন। দলের সর্বোচ্চ রানও আসে তার ব্যাট থেকেই। ইনিংসের শেষ দিকে ঝড় তুলে বাংলাদেশের রান ৩৩০-এ নিয়ে যেতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন মাহমুদউল্লাহ। ইনিংসের শেষ ৪ ওভারে ৫৪ রান নিয়েছিল বাংলাদেশ। আর এর পেছনে মাহমুদউল্লাহর ৩৩ বলে ৪৬ রানের ইনিংসটার অনেক বড় ভূমিকা। ব্যাট হাতে অপরাজিত ছিলেন মিরাজও। পরে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসিসের পরম আরাধ্য উইকেটটাও নেন তিনি। সম্মিলিত নৈপুণ্যেই এবারে বিশ্বকাপ জয় দিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ।

ইউরোপে ১৯ ঘণ্টা রোজা রাখতে হয়। এর মাঝে ম্যাচের জন্য কঠোর অনুশীলনের পাশাপাশি ম্যাচ খেলার শারীরিক ও মানসিক চাপ থাকেই। নিজেকে ফিট রাখা আরও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আর সেই চাপ জয় করে দলকে বিজয়ের আনন্দে ভাসাতে গিয়ে একই কাতারে এসে পড়লেন মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, মিরাজ, সালাহ ও মানেরা।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর