স্টূ্ক্রড্রাইভার ঢুকিয়ে কিশোরের চোখ নষ্ট করল চাচাতো ভাই!

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে স্টূ্ক্রড্রাইভার ঢুকিয়ে এক কিশোরের দু’চোখ নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্বজনের অভিযোগ, পারিশ্রমিকের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে চাচাতো ভাই এই বর্বরতা চালিয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, ছেলেটির এক চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যটিতেও আলো ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

এক মাসেরও বেশি সময় আগে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এ ঘটনা ঘটে। নজিরবিহীন এ বর্বরতায় গুরুতর আহত মিলন হোসেন (১৫) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় তার চাচাতো ভাই মামুনসহ তিনজনকে আসামি করে টাঙ্গাইলের আদালতে মামলা করেছে পরিবার।

মিলনের বাবার নাম গিয়াস উদ্দিন। বাড়ি মির্জাপুরের বানিয়াচালা গ্রামে। গিয়াসের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। একমাত্র ছেলে মিলন চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করার পর অর্থকষ্টে আর এগোতে পারেনি। এলাকায় চাচাতো ভাই মামুনের সঙ্গে ডিশলাইনে কাজ করত সে।

ঢামেক হাসপাতালের ৩০১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে মিলন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বিষণ্ণ মনে শুয়ে আছে সে। পাশে থাকা গিয়াস জানান, মামুনের মামা কবির

হোসেনের ডিশ ব্যবসা রয়েছে। মামার ডিশলাইনে কাজ করে মামুন। মামুনের সঙ্গে মাঝেমধ্যে একই কাজ করত মিলন। তার সঙ্গে আল আমিন নামে তাদের এক প্রতিবেশীও কাজ করে। মামুন মিলনকে কোনো টাকা-পয়সা দিত না। কাজের টাকা চাওয়ায় মিলনের ওপর মামুন ক্ষুব্ধ হয়।

গত ১২ এপ্রিল বিকেলে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ এলাকার একটি তিনতলা বাড়ির ছাদে নিয়ে মিলনের দু’চোখ ও নাকের মধ্যে স্টূ্ক্রড্রাইভার ঢুকিয়ে আঘাত করে সে। এ সময় আল আমিন উপস্থিত ছিল। পরে মিলনের ডান হাতের তালুতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিদ্যুৎস্পর্শে তিন তলার ছাদ থেকে মিলন পড়ে গেছে বলে অপপ্রচার চালায় মামুন, আল আমিন ও কবির হোসেন। তারা রক্তাক্ত অবস্থায় সন্ধ্যায় মিলনকে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে যায়।

খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান মিলনের বাবা-মা। মামুন তাদের জানায়, মিলন তিন তলার ছাদ থেকে পড়ে গেছে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় কুমুদিনী হাসপাতাল থেকে ওই রাতেই মিলনকে আনা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সে সময় মামুনও সঙ্গে ছিল।

ঢামেক হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফরিদুল হাসানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে মিলনের। ডা. ফরিদুল বলেন, রোগীর ডান চোখ একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। দৃষ্টিশক্তি আর কখনই ফিরে পাবে না। বাঁ চোখের অবস্থাও ভালো নয়। এটির দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসার সম্ভাবনাও খুব কম।

মিলনের বোন নাসরিন বলেন, হাসপাতালে টিকিট কাটা থেকে শুরু করে ভর্তির সব কার্যক্রম করে মামুন। হাসপাতালে মিলনের নাম গোপন করে বিল্লাল হোসেন নামে কাউন্টার থেকে টিকিট কাটে সে। বিল্লাল নামেই মিলনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এমনকি হাসপাতালের রেজিস্টার খাতায় মিলন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে বলেও তথ্য লেখায় মামুন। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে মামুন স্বজন ও হাসপাতালে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে বলে অভিযোগ নাসরিনের। বিল্লাল নামেই চিকিৎসা চলে মামুনের। পরে হাসপাতাল পরিচালকের কাছে নাম সংশোধনের আবেদন করেন মিলনের বাবা।

মিলন বলেন, ‘ঘটনার দিন বিকেলে আল আমিন ও মামুন আমাকে নিউটেক্স গেটের পাশে আনিস মুন্সির তিনতলা বাড়ির ছাদে নিয়ে যায়। নেওয়ার পর মামুন আমাকে জিজ্ঞেস করে, কেন তার কাছে ডিশলাইনে কাজের টাকা চেয়েছি। সে টাকা দিতে পারবে না। এ নিয়ে তর্ক হয়। একপর্যায়ে মামুন আমার ডান চোখে স্টূ্ক্রড্রাইভার ঢুকিয়ে ঘোরাতে থাকে। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই। আর কিছু মনে নেই আমার।’

মির্জাপুর থানার ওসি একেএম মিজানুল হক জানান, ঘটনার পর মিলনের পরিবার থেকে থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। গত মঙ্গলবার তিনি ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারেন। এর পরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ। ওসি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, মিলনের চোখে মামুন আঘাত করেছে। মামুন পলাতক। গতকাল পর্যন্ত আদালত থেকে থানায় মামলা সংক্রান্ত কোনো নথি আসেনি বলে জানান তিনি।

সূত্র: সমকাল।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর