কেনো মাদরাসা ছাত্রীকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা?

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতরে মাদরাসা ছাত্রীকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। স্বজনদের অভিযোগ, যৌন হয়রানির মামলা করার জেরে অভিযুক্ত শিক্ষকের ইন্ধনেই তাকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

শনিবার (৬ এপ্রিল) সকালে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

আহত ওই ছাত্রীর একটি অডিও রেকর্ড গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। রেকর্ডে ওই ছাত্রী জানান, সকালে আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশ নিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে যান তিনি। মাদরাসায় পৌঁছালে এক ছাত্রী তার বান্ধবী নুসরাতকে ছাদের উপর নিয়ে যান। সেখানে আরও চার-পাঁচজন মুখোশধারী ছাত্রী ছিলেন। তারা বলেন, প্রিন্সিপালের ওপর যে অভিযোগ করেছিস তা মিথ্যা, বল।

আমি বলি না, আমি যা বলেছি সব সত্যি। তারা বলে, তোকে এখনই মেরে ফেলবো। আমরা তোর সব খবর নিছি। তোর প্রেম সম্পর্কিত সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। আমি বলি, আমি সব সত্য বলেছি। আমি শিক্ষকদের সম্মান করি, কিন্তু যে শিক্ষক আমার গায়ে হাত দিছে আমি তার প্রতিবাদ করেছি। সঙ্গে সঙ্গে তারা আমার হাত-পা ধরে গায়ে আগুন দেয়।

এ সময় তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। তাৎক্ষণিকভাবে নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন শিক্ষকরা।

ডাক্তার জানান, কেরোসিন ঠেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় তার শরীরে। রোগীর মুখ পর্যন্ত পুড়ে গেছে। কথা বলতে পারছে না। প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

এদিকে পুলিশ জানায়, তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। এ নিয়ে মামলা দায়ের পর কারাগারে রয়েছে সে। ওই ঘটনার জেরেই নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা চালানো হয় বলে দাবি করেন তার ভাই মাহমুদুল হাসান।

ভাই মাহমুদুল বলেন, তার সহপাঠীরা নুসরাতকে জানান, তুই অধ্যক্ষের বিষয় নিয়ে এতো বাড়াবাড়ি কেন করতেছিস। যা হয়ে গেছে সেটা ভুলে যায়। নুসরাত বলে, হুজুর অন্যায় করেছে, যাতে আর কারো সাথে অন্যায় করতে না পারে। এখন এটা আইনিভাবে গেছে আইনিভাবে মোকাবেলা করা হবে।

এদিকে স্বজনদের দাবি, যারা এ কাজটি করেছে। আমরা তাদের সকলের ফাঁসি চাই।

এর আগে, গত বছরের নভেম্বর আলিম ২য় বর্ষের এক ছাত্রীকেও যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে। ওই সময় তাকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা থাকলেও স্বপদে বহাল ছিলেন অভিযুক্ত সিরাজ উদ্দৌলা।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর