শুক্রবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিট। রাজধানীর বনানীর নরডিকস হোটেলে কয়েকজন উগ্রবাদী ঢুকে পড়ে। প্রথমে একটি হলুদ রঙের ট্যাক্সি ক্যাবে করে চারজন উগ্রবাদী অতিথির ছদ্মবেশে নরডিক হোটেলে প্রবেশ করে। আগে থেকেই হোটেলটিতে উগ্রবাদীদের আরো কয়েকজন সহযোগী অবস্থান করছিলেন।
এরপর হোটেলের তৃতীয়তলায় কয়েকজন বিদেশী অতিথিকে জিম্মি করে ফেলে তারা। জিম্মি করে উগ্রবাদীদের আমিরকে ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানান তারা। সেই আমিরকে ছেড়ে না দিলে হোটেলের বন্দীদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। ওই খবর পেয়ে কিছু সময়ের মধ্যে র্যাব হোটেলটি ঘিরে ফেলে।
অন্যান্য সংস্থার সহায়তায় অ্যাকশান প্ল্যান তৈরি করা হয়। প্রথমে র্যাবের স্নাইপার টিম রাস্তা দিয়ে অংশ নেয়। এ সময় হোটেলের সামনে কয়েকটি গ্যাস বোমা নিক্ষেপ করা হয় এবং উগ্রবাদীদের বিভ্রান্ত করতে বিভিন্ন দিক থেকে একই সাথে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তখন হেলিকপ্টারে করে ওই হোটেলের পাশের ভবনে নামেন র্যাবের কমান্ডো দলের সদস্যরা। এ ছাড়াও বিভিন্ন ভবনের ছাদে স্নাইপার রাইফেল নিয়ে অবস্থান নেন র্যাব সদস্যরা। চলে মুহুর্মুহু গুলি। হোটেলের ভেতর থেকে র্যাবকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় গুলি। র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে।
এরই মধ্যে আরেকটি দল আইইডিডি রেসপন্স, ভেকেল, র্যাটার ভেকেল, জ্যামার, টিসিভি নিয়ে ঘিরে ফেলে হোটেলটি। দুই মিনিটের মধ্যে একটি হেলিকপ্টার থেকে কয়েকজন কমান্ডোকে হোটেল ছাদে নামিয়ে দেয়া হয়। ত্রিমুখী সংঘর্ষে মাত্র চার মিনিটের মধ্যে শেষ হয় অভিযান। জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করা হয় আহত কয়েকজনকে। নিহত হয় জঙ্গিরা। আহতদের দ্রুত র্যাবের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে শ্বাসরুদ্ধকর এই বর্ণনা বাস্তব কোনো জঙ্গি হামলার নয়। র্যাবের একটি বিশেষায়িত মহড়ার। গতকাল বিকেলে বনানীর ১৭ নম্বর সড়কের ব্লক-সিতে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। পুরো অভিযান বাস্তবতার আলোকে পাঠানো এমনভাবে পরিচালনা করা হয় দেখে যে কারো মনে হতে পারে যেন সত্যিই জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, কোনো মহড়া নয়!
মহড়া শেষে হোটেলের সামনে বের হয়ে র্যাবের কমান্ডো দল বিজয় সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখান। মহড়া শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন।
র্যাবের বিশেষায়িত মহড়া শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেন, অনেকেই বলছেন রাজধানীতে ৫০-৬০টি ক্যাসিনো আছে। কেউ কেউ বলছেন ৫০০ ক্যাসিনো আছে। আবার অনেকেই বলেন, ঘরে ঘরে ক্যাসিনো আছে। আমি বলছি, আপনারা দয়া করে তালিকা দেখান। এভাবে গুজব ছড়াবেন না। এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আপনারা আমাদের পাশে আছেন ধন্যবাদ। কিন্তু ভুল তথ্যে দিয়ে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন র্যাব ডিজি।
তিনি বলেন, আমরা ক্যাসিনো বন্ধের অভিযানে নেমেছি। এর মধেই ঢাকা শহরে এখন সব ক্যাসিনো বন্ধ হয়ে গেছে। তবে অভিযানকে অন্য খাতে প্রবাহিত করতে গুজব ছড়াবেন না।
তিনি আরো বলেন, আমরা শুধুই ক্যাসিনো বন্ধের অভিযানে নেমেছি। অনুমান নির্ভর তথ্য দিয়ে গুজব ছড়াবেন না। অনেক ক্ষেত্রে এতে মানুষের ক্ষতি হয়।
বেনজীর আহমেদ বলেন, যেকোনো ধরনের জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে র্যাব। জঙ্গিদের সব ধরনের নাশকতা গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য তারা প্রস্তুত।
মোস্তাফা কামাল উদ্দিন বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন, আজকের মহড়া তারই অংশ। জঙ্গি দমনে র্যাবের এই মহড়া খুব ভালো উদ্যোগ।
বার্তাবাজার/ডব্লিওএস