মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার প্রশাসনে দালাল ঢুকে গেছে

কিছুদিন আগে ওয়াজ অনুষ্ঠানে ‘খাবেন?’ ‘ঢেলে দেই?’ ‘ভাই পরিবেশটা সুন্দর না?’ ‘কোনো হইচই আছে?’ এ ধরনের নানা উক্তি করে সমাজিক গণমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ইসলামি বক্তা মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরী ভোলার বোরহানুদ্দিনের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্য করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে এক ওয়াজ অনুষ্ঠানে তাকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে এই মন্তব্য করতে শোনা গেছে। ‘ভোলায় মুসলমানদের হত্যার জবাব চাই’ শিরোনামের ওই ভিডিওতে তাকে শ্রোতাদের উদ্দেশে আরো বলতে শোনা যায়, ‘আমরা জাতে কী? মুসলমান।

তবে হাতের পাঁচ আঙ্গুলের মতোই আমাদের মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের মুসলমান আছে। যদি মুসলামানের বাচ্চা হয়ে থাকেনম সত্যিকারের মুসলমান হয়ে থাকেন, আমার কথার আওয়াজ দিবেন।

এই যে কিছুদিন আগে ভোলার বোরহানুদ্দিনে বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামের একটা ছেলে ফেসবুকে আমাদের নবীকে কটাক্ষ করে কথা বলেছিলো, ৯০% মুসলমানের দেশে কেউ যদি আমার নবীর বিরুদ্ধে কথা বলে তাতে আমার হৃদয়ে আঘাত লাগতে পারে কি পারে না? আঘাত লাগতেই পারে স্বাভাবিক।

এই আঘাত লাগার ফলে এই মুসলমান কি ঘরে বসে থাকতে পারে? আমার প্রিয় নবীকে কটাক্ষ করে কথা বলবে, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে লেখালেখি করবে, মুসলামান কখনো চুরি ঘরে বসে থাকতে পারে না। কারণ রাসুল হলেন আমাদের মুসলমানদের আত্মা। তাহলে আমরা রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করবো এটা স্বাভাবিক।’

‘আমার স্বাধীন সোনার বাংলার ভোলার বোরহানুদ্দিনে তৌহিদি মুসলিম জনতা সেই কটাক্ষকারীর বিরুদ্ধে যখন রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করেছিলো তখন তাদের ওপর এমনভাবে এলোপাথাড়ি বুলেট ছোড়া হয়েছিলো এটা আমাদের হৃদয়ে অত্যন্ত রক্তক্ষরণ করেছে।’

‘৯০% মুসলমানের দেশে তৌহিদি জনতা যদি নবীকে কটাক্ষ করা নিয়ে প্রতিবাদ করে তাহলে এই দেশের প্রশাসন তাদেরকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার কথা। শুধুমাত্র মাথায় টুপিওয়ালারাই প্রতিবাদ করবে না। এই প্রতিবাদ করবেন ওসি মহোদয়, যদি মুসলমান হয়ে থাকেন।

প্রতিবাদ করবেন ডিসি মহোদয়। এই প্রতিবাদ করবেন এসআই মহোদয়। এই প্রতিবাদ করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এই প্রতিবাদ করবেন রাষ্ট্রপতি।’ ‘কিন্তু যারা নবীজিকে কটাক্ষ করেছে, যারা গুলি চালিয়েছে, তারা আর সব পুলিশ-প্রশাসন এক না। আমি বলতে পারি, হে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার প্রশাসনে দালাল ঢুকে গেছে।’

‘আমি বলতে চাই, আমার নবীকে গালি দিয়েছে যে তাকে অনতিবিলম্বে ফাঁসির কাঠগড়ায় আনতে হবে।’ ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলছি, যারা ধর্ম অবমাননা করবে, নবীকে নিয়ে কটাক্ষ করবে তাদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আইন করুন।’

‘আর নয়তো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সবাই এক ময়দানে হাজির হয়ে যাবে।’ প্রসঙ্গত, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দাওয়াতে ঈমানী বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুফতী মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেন মুফতী মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরী।

তাঁর পারিবারিক ইতিহাস ও বংশগত পরিচয় নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তবে তিনি তর্ক বিতর্কের মধ্য দিয়েই যাচ্ছেন। যদিও তিনি তাঁর সম্পর্কে বিতর্কের বিভিন্ন ব্যাখ্যা তিনি দিয়ে আসছেন। তার বিরুদ্ধে নাচ করার যে অভিযোগ রয়েছে তাকে তিনি ক্যামেরার কারসাজি বলে উল্লেখ করেছেন।

কিছুদিন আগে তার একটি ওয়াজের অংশ বিশেষ ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ‘কেউ কথা কইয়েন না, একটু চা খাব? খাই একটু? আপনারা খাবেন? ঢেলে দেই? ঢেলে দেই? … ‘ভাই পরিবেশটা সুন্দর না? কোনো হইচই আছে? আমি কি কাউকে গালি দিয়েছি? কারোর বিরুদ্ধে বলতেছি? এরপরও সকালে একদল লোক বলবে, তাহেরী বালা না।’

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জিকিরের সময় নেচে-গেয়ে ‘বসেন বসেন, বইসা যান’ বলায় সমালোচিত হন তাহেরী। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে তৈরি হয়ে নানা ট্রল ও ভিডিও। এরপর কিছুদিন ওয়াজ বন্ধ রেখেছিলেন তিনি। সম্প্রতি ফের আলোচনায় এলেন এই বক্তা।

২০১৩ সালে নরসিংদীতে গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরীর ওয়াজে ‘তাবলীগের লোকদের কাফের বলে গালাগাল, আলেম-ওলামা সম্পর্কে এবং শরীয়তের পীর মাশায়েকদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য’নিয়ে রায়পুরার অলিপুরা শাহেরচর ও বড়চর গ্রামে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ অর্ধশত শটগানের ফাঁকা গুলি ও ৩০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ওই ঘটনায় একটি মামলাও হয়। উত্তরবঙ্গের একটি জেলায় সম্প্রতি এক ওয়াজ মাহফিলে কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের ‘পোলা তো নয় সে যে আগুনের গোলা রে’ গানটি নেচে-গেয়ে উপস্থাপন করায় ইসলামী আলোচকদের সমালোচনার মুখে পড়েন তাহেরী।

স্থানীয়দের মতে, গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরী একজন লাল পাগড়ি ও লাল আলখেল্লা পরিহিত ভণ্ডপীর। রায়পুরার মাস্তানগঞ্জ নামক একটি মহল্লায় খাজা বাবার দরবার নাম দিয়ে এখানে দীর্ঘদিন ধরে একটি আস্তানা গড়ে তুলেছেন। এ আস্তানায় সার্বক্ষণিক আড্ডা দেয়া এলাকার বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত লোকজন।

এই আস্তানায় নারীপুরুষ একত্রে নেশা করে নাচ গান করে। তবে ঘটনার সত্যতা কতটুকু বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরী তার বক্তৃতায় তাবলীগের লোকদের কাফের বলে গালাগাল করে এবং আলেম ওলামা সম্পর্কে ও শরীয়তের পীর মাশায়েকদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে।

গত ১৫ জানুয়ারি নরসিংদীতে স্থানীয় ছাদেক চেয়ারম্যান ও এলাহী মেম্বার মিলে অলিপুরা গ্রামে গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরীকে প্রধান বক্তা করে এক জলসার ঘোষণা দিলে এলাকার লোকজনের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তারা আত তাহেরীর আগমন বন্ধের দাবিতে মিছিল করে রায়পুরা প্রধান সড়কে অবস্থান নেয়।

তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়েছে।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর