৪০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বোনের খোঁজ দিলো ফেসবুক

আমেরিকা প্রবাসী জ্যোতি এডলা চার দশক পরে খুঁজে পেয়েছেন তার বোনকে। ফেসবুক মাত্র চার ঘণ্টায় খুঁজে দিয়েছে তার বোন কমলাকে।

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের মেয়ে জ্যোতি এডলা রুদ্রপতি। ১৯৮০ সালে জ্যোতিরবোন কমলা তাদের রাজ্যে কর্মরত এক সিআরপিএফ জওয়ান হিমলিয়ানার প্রেমে পড়েন। ওই বছরই বিয়ের পরে মিজোরামে চলে যান তারা। তারপর থেকে কমলার সঙ্গে বাড়ির যোগাযোগ কমতে থাকে। তখন মোবাইলের যুগ না হওয়ায় ফোনে কথা বলারও তেমন সুবিধাও ছিল না। মিজোরাম সম্পর্কে জ্যোতির পরিবারের তেমন ধারণাও ছিল না। বোন আর দুলাভাইয়ের স্মৃতি বলতে জ্যোতির কাছে ছিলো স্রেফ সাদা-কালো একটা ছবি। আর ডায়েরির হলদে হয়ে যাওয়া পাতায় লেখা মিজোরামের একটা ঠিকানা।

এর মধ্যে কেটে গিয়েছে ৩৯ বছর। অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলঙ্গানা রাজ্য হয়েছে। জ্যোতি নিজে বিয়ের পরে এখন আমেরিকার নিউ কাসলে থাকছেন। কিন্তু ওই ডায়েরির পাতা আর সাদা-কালো ছবিটা কাছছাড়া করেননি। আমেরিকা থেকেও ২০ বছর ধরে বিভিন্ন ভাবে মিজোরামে বড় বোনের খোঁজ করেছেন। কিন্তু কোনো হদিসই পাননি।

গত ১৫ জুলাই ফেসবুকে মিজোরাম নিউজ (ইংলিশ) নামে একটি গ্রুপের সন্ধান পান জ্যোতি। সেখানে বোন আর দুলাইভইয়ের সেই পুরনো ছবিটা পোস্ট করে লেখেন, ‘সিয়াসলুক গ্রামের হিমলিয়ানার সঙ্গে আমার বোন কমলার বিয়ে হয়েছিল ১৯৮০ সালে। তখন থেকে আপার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। আমার দুলাভাই সিআরপিএফে কাজ করতেন। ৪০ বছর ধরে তাদের খুঁজে চলেছি।’

গ্রুপের সদস্যরা এ বার নিজেদের মতো করে খোঁজ শুরু করে দেন। চার ঘণ্টার মধ্যেই খবর মেলে কমলার পরিবারের। জানা যায়, কমলার স্বামীর নামের বানান ভুল। আসলে তার নাম লিয়ানজারা। তিনি ২০১৩ সালে মারা গিয়েছেন। বোন কমলা এবং তার ছেলে আইজলের কাছেই লাওইপুতে থাকেন। জোগাড় হয় বোনপো জোরামাওইয়ার ফোন নম্বরও। আমেরিকা থেকে জোরামকে ফোন করেন জ্যোতি। ছেলে জানায়, মা আত্মীয়দের বাড়ি গিয়েছেন কোলাশিব জেলায়। জোরামের থেকে নম্বর নিয়ে সেখানে ফোন করে ৩৯ বছর পরে দিদির সঙ্গে কথা বলেন জ্যোতি। এত দিনের অব্যবহারে কমলা তেলুগু ভাষা ভুলেছেন। কিন্তু চোখের জল আর আবেগে আমেরিকা থেকে মিজোরামের সব ব্যবধান মুছে গিয়েছে।

জ্যোতি জানান, তার ৮৬ বছর বয়সী মা বড় মেয়ের কথা জানতে পেরে কেঁদে ফেলেছেন। তেলঙ্গানায় থাকা তিন ভাইকেও বোনের খবর দিয়েছেন জ্যোতি। নিজে যত দ্রুত সম্ভব আমেরিকা থেকে আইজলে আসবেন।

কমলাদেবীর ছেলে জোরাম আইজল থেকে ফোনে জানান, সিআরপিএফের কাজ থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়েছিলেন বাবা। কষ্ট করেই সংসার চলছিল। তার মধ্যেই ক্যানসার ধরা পড়ল। ২০১৩ সালে বাবা মারা গিয়েছেন। মায়ের দিকের আত্মীয়দের কথা জানলেও তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য তাদের ছিল না। এত দিন পরে আমেরিকায় খালার সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ায় তারাও আনন্দিত।

মিজোরামের ওই গ্রুপের সদস্যদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জ্যোতি বলেছেন, চল্লিশ বছরে যা সম্ভব হয়নি, মিজোরামের ভাই-বোনেরা চার ঘণ্টায় তা করে দেখিয়ে দিলেন! আর এটাই সত্যিকারের সামাজিক মাধ্যমের কাজ।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর