নয়াপল্টন কার্যালয় অবরুদ্ধ পদপ্রত্যাশীদের মারধর

বয়সসীমা বাতিল করে ধারাবাহিক কমিটির দাবিতে সোমবারও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির নেতারা। এ সময় বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুই ঘণ্টা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

সার্চ কমিটিতে থাকা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন কার্যালয়ে ঢুকতে চাইলে তাকে লাঞ্ছিত করেন বিক্ষুব্ধরা। ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী অন্তত ৫ জন নেতাকেও ব্যাপক মারধর করেন তারা। দাবি আদায়ে আজ তারা ফের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।

বেলা ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধরা কাকরাইলের স্কাউট ভবনের কাছে সমবেত হয়ে মিছিল নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসে। তারা কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া হয়। বিক্ষুব্ধরা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের পক্ষে স্লোগান দেন। এছাড়া ‘অবৈধ প্রেস রিলিজ মানি না, মানব না’, ‘সিন্ডিকেটের দালালদের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘হৈ হৈ রৈ রৈ, দালালেরা গেল কৈ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়। বিক্ষোভ চলাকালে তারা কাউকে কার্যালয়ে কাউকে ঢুকতে বা বের হতে দেননি।

দুপুর ১২টার দিকে বিএনপির নেতা ফজলুল হক মিলন কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে ফিরে যান মিলন। দুই ঘণ্টা অবস্থানকালে ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী অন্তত ৫ নেতাদের মারধর করা হয়। বিক্ষোভকারীদের পক্ষে সাবেক কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকত সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রদলের এ তফসিল আমরা মানি না। এটি বাতিল করে বয়সসীমা উঠিয়ে পুনঃতফসিল করে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন দিতে হবে। যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।

সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ বিপুল বলেন, নিজস্ব পছন্দের কাউকে নির্বাচিত করানোর জন্য হয়তো কথিত এ সিন্ডিকেট বয়সসীমার শর্তারোপ করেছে। এটা বাতিল করতে হবে। আমাদের ভাই, যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের ২০-২২ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম রয়েছে। আমরা মনে করি, এটা অবিচার করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধরা আরও বলেন, ছাত্রদলের সংকট সমাধান না করে ১২ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন তারা ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা। ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জহিরউদ্দিন তুহিনকে বহিষ্কার করা হয়েছে, যার বিরুদ্ধে ৩৮টি মামলা। আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বেশ কয়েকবার কারাবরণ করেছেন। প্রত্যেক নেতাই বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। এই ত্যাগী নেতাদের যদি এভাবে মূল্যায়ন করা হয় তাহলে তৃণমূলে খারাপ বার্তা যাবে।

দুপুর দেড়টার দিকে কর্মসূচি শেষে বিক্ষুব্ধদের পক্ষে সাবেক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্না সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমাদের দাবি ২০০০ সালের বয়সসীমা উঠিয়ে দিতে হবে। যে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে তা বাতিল করে পুনঃতফসিল দিতে হবে। দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। আগামীকালও (আজ) আমরা কর্মসূচির জন্য নয়াপল্টনে আসব। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সিন্ডিকেট দায়ী থাকবে। তিনি বলেন, আমরা ছাত্রদলকে ভালোবাসি, এই দলের জন্য আমরা রাজপথে জীবন-যৌবন সব দিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের নেতারা আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে আলাপ করে সুষ্ঠু সমাধান করবেন।

পরে ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ নেতারা নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। সাবেক সহ-সভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবির বলেন, আমরা মিছিল নিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। পেছন থেকে মিছিলে ককটেল মারা হয়। এতে সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আল আশরাফ মামুন আহত হয়েছেন। ককটেল হামলার জন্য তিনি ‘সিন্ডিকেটকে’ দায়ী করেন।

এদিকে সাবেক নেতাদের বিক্ষোভ শেষে ছাত্রদলের একটি অংশ ১৫ জুলাই ঘোষিত তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিল করেন।

উল্লেখ্য, গত ৩ জুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। এর প্রতিবাদে ১১ জুন থেকে সংগঠনটির সদস্য সাবেক নেতারা আন্দোলন করে আসছেন। এরই মধ্যে গত শনিবার রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১২ ছাত্রনেতাকে বহিষ্কার করা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এ পদক্ষেপ নেয়া হয় বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।

বার্তাবারজার/এএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর