ভালো থাকুক বাবা নামের মিথ্যেবাদী সকল শ্রমিক

হাতিরঝিল থেকে ফার্মগেটের উদ্দেশ্যে রিক্সাযোগে আসছিলাম। সাংবাদিকের স্বভাবগত কারণেই আলাপচারিতায় মেতে উঠলাম চালকের সাথে। এক ছেলে এক মেয়ের এই জনকের বাড়ি নরসিংদী জেলায়। ঢাকায় এসে রিকশা চালাচ্ছেন মাত্র ১৫ দিন। তার মধ্যে আবার বাড়ি গিয়ে ৫ দিন থেকেও এসেছেন তিনি। সব মিলিয়ে ১০ দিন রিকশা চালাচ্ছেন হাতিরঝিল টু ফার্মগেট। ছেলেটির বয়স ১০ মাস। তাকে দেখতেই বাড়ি যেতে হয়েছিলো। বাড়ি যাওয়ার পর তাকে নাকি কেউ চিনতেই পারছেন না। ১০ দিনের পরিশ্রমে অনেকটাই শুকিয়ে গেছেন তিনি।

মেয়ের নাম আয়েশা (ছদ্মনাম)। পড়ে দশম শ্রেণিতে। স্টুডেন্ট হিসেবেও ভালো। হঠাৎ ভালো একটা বিয়ের প্রস্তাব আসে। আজ হোক কাল হোক মেয়েকেতো বিয়ে দিতেই হবে। এমন ভালো পাত্র কি পরে পাওয়া যাবে? এসব চিন্তা থেকে মেয়ের বিয়ে দিলেন তিনি। যার খরচ যোগাড় করতে পুরো ব্যবসায়ের চালান ব্যয় করতে হয়েছিলো তাকে। শশুর বাড়িতে খাট-ড্রেসিং টেবিল পর্যন্ত দিতে হয়েছে।

কষ্ট চেপে গিয়েই কথাগুলো বলছিলেন তিনি। কিন্তু বেশিক্ষন চেপে থাকতে পারেননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, মামা আপনিতো স্টুডেন্ট। আপনিতো জানেন একটা মেয়েকে পড়াশোনা করাতে কতো খরচ। পড়াশোনার পরে আবার বিয়ে দিতেও অনেক খরচ করতে হয়। আগে ছোটখাট ব্যবসায় করতেন এলাকায়। ভালোই চলছিলো তাদের ছোট্ট সংসার। মেয়ের পড়াশোনার খরচ মিটিয়েও সুখেই কেটে যাচ্ছিলো।

সংসারের হাল ধরতে এখন রিকশা চালাচ্ছেন। লোকলজ্জার ভয়েই ঢাকায় রিকশা চালান তিনি। বাড়িতেও কেউ জানে না তিনি যে একজন রিকশা চালক। বাড়িতে সবাই জানে তিনি চাকরি করছেন।

ভালো থাকুক বাবা নামের এসকল মিথ্যেবাদী শ্রমিকরা। ভাল থাকুক বিয়ের নামে এসকল বাবাদের কাছ থেকে সম্পদ হাতিয়ে নেয়া পিশাচরা। দোয়া করি আল্লাহ যেন জান্নাত নামক মেয়ের জন্ম তাদের ঘরে না দেয়।

লেখক: নাঈম কামাল https://www.facebook.com/mdnaim.kamal

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর