নোবিপ্রবি বিএনসিসি পরিবারের চড়ুইভাতি

জ্ঞান, শৃঙ্খলা, স্বেচ্ছাসেবী এ তিন মূলমন্ত্রে চির উজ্জীবিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। নিয়মিত প্রশিক্ষণ ক্লাস, ড্রিল সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমে নিজেদের সর্বদা ব্যস্ত রাখেন নোবিপ্রবি বিএনসিসি প্লাটুনের ক্যাডেটবৃন্দ। পাশাপাশি ক্যাম্পাস জীবনের সিটি, পরীক্ষা, ক্লাস, প্যারা সবকিছুই আত্মার সঙ্গে মিশে গেছে।

সবুজ ক্যাম্পাসের আলো-বাতাস, মানুষ, কংক্রিটের ভবনের প্রতিটি ইট-পাথর কিংবা প্রতিটি ঘাস-লতাপাতার সঙ্গেই যেন গড়ে উঠেছে নোবিপ্রবি বিএনসিসি প্লাটুনের ক্যাডেটদের নিবিড় সখ্যতা। তাই তো জীবনের রোমাঞ্চকর এ ক্ষণিক সময়টুকু দীর্ঘায়িত করতে ক্যাডেটদের চড়ুইভাতি আয়োজনের প্রয়াস।একটি দিনের মুছলো স্মৃতি, ঘুচল চড়ুইভাতি,/পোড়াকাঠের ছাই পড়ে রয়, নামে আঁধার বাতি’ চড়ুইভাতির অপার্থিব সৌন্দর্যের বর্ণনা পাই রবীন্দ্রনাথের চড়ুইভাতির কবিতার মাধ্যমে।

দীর্ঘদিন ধরে নোবিপ্রবি বিএনসিসি পরিবারের চড়ুইভাতি আয়োজনের জন্য বার বার তারিখ ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু ঠিক জুতসই হচ্ছিল না। ক্লাস,পরীক্ষার চাপ থেকে কিঞ্চিৎ মুক্তি না পাওয়ায় তাই ব্যাটে বলে হয়ে উঠছিলও না।

নোবিপ্রবি বিএনসিসি প্লাটুনের পিইউও মাহবুবুল আলম নাইম স্যার এবং পিইউও আসমা তালুকদার ম্যামের নির্দেশনায় আমরা চড়ুইভাতি আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করতে কার্যক্রম শুরু করি। অবশেষে ১৭ ই নভেম্বর ( বৃহস্পতিবার) নির্ধারিত হয় আমাদের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত চড়ুইভাতি আয়োজন।

চড়ুইভাতির রান্নার আয়োজনটি হয়েছিল নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নীলদিঘির নীল জলরাশির পাড়ে। বিস্তীর্ণ দিঘিরপাড়। নিরিবিলি স্থান। শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে মিষ্টি রোদ চারদিকে। সঙ্গে রয়েছে দিঘির পাড়ের শীতল হাওয়া। সকাল হতে না হতেই সবাই জড় হয় পূর্বনির্ধারিত স্থান নোবিপ্রবির নীলদীঘির পাড়ে। বাজারের দায়িত্বে থাকা সবাই বাজার নিয়ে যথাসময়ে হাজির হয়। প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে শুরু হয় কাজের ধুম।

দায়িত্ব অনুযায়ী সবাই যে যার মতো শুরু করে কাজ। কেউ পানি আনা,কেউ কাটাকাটি, কেউ চুলা জ্বালানো,কেউ আবার হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কারের কাজে নামে। কাঠ কুড়ানো, চুলা বানানো, চাল ধোয়া, মাংস কাটাসহ সব কাজই করা হয়েছে মিলেমিশে। বিএনসিসি প্লাটুনের সিনিয়র – জুনিয়র মিলে হাঁড়িপাতিল বসিয়ে সকালবেলা থেকেই শুরু হয়েছি চড়ুইভাতির রান্নার যুদ্ধ। এ সময়ে সবাই হয় বাবুর্চি, নয় সহযোগীর ভূমিকায়। অনেক নাম!ধরে ধরে বলতে গেলে বিশাল এক তালিকা বনে যাবে।

রান্না শেষ হতে হতে বেলা একটা । ততক্ষণে সবাই অনেক ক্ষুধার্ত। রান্না শেষে খাবার পরিবেশন করা হয় নোবিপ্রবি শহীদ ক্যাডেট সার্জেট রুমী ভবনে। নোবিপ্রবি বিএনসিসির পিইউও মাহবুবুল আলম নাইম স্যার এবং পিইউও আসমা তালুকদার ম্যাম সহ নোবিপ্রবি বিএনসিসির সাবেক ক্যাডেটবৃন্দরা চড়ুইভাতি আয়োজনে এলেন আমাদের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে। নোবিপ্রবি বিএনসিসি পরিবারের ৬০ জন সদস্যের একসাথে জম্পেশ খাওয়া স্মৃতি হয়ে থাকবে আজীবন। সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ আমাদের রান্না ও আয়োজনের প্রশংসা করলেন।

পড়ন্ত বিকালে বিএনসিসি প্লাটুনের ক্যাডেটদের অংশগ্রহণে শুরু হলো সাংস্কৃতিক ও আড্ডা পর্ব। প্রথমে বালিশ ছোড়া খেলা হয় এবং একটু পর পর নতুন গানে জমে উঠতে থাকলো অর্থনীতি পরিবারের আয়োজিত চড়ুইভাতির সাংস্কৃতিক পর্ব। সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত নাচ গানের আয়োজনের পরে সবাই মিলে চায়ের আড্ডার মাধ্যমেই শেষ হয় আমাদের আয়োজন।

পড়লেও ক্লান্তির কোনো ছাপ ছিল না আমাদের চোখে-মুখে। ‘মাঠের সীমাহীনতা ও বাতাসে সামিয়ানার চঞ্চলতা একদম তুচ্ছ হয়ে পড়েছে একঝাঁক তরুণের উচ্ছ্বলতার কাছে।

ফাহাদ/বার্তাবাজার/এম.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর