কে জানত এটিই নিশাঙ্গার শেষ হাসি

শ্রীলংকায় গির্জা ও হোটেলে সিরিজ বোমা হামলায় এ পর্যন্ত ২৯০ জনের প্রাণহানির খরব পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। শ্রীলংকায় বিভিন্ন স্থানে এখনও লেগে আছে রক্তের দাগ। লোকজনের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শ্রীলংকার জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব শান্তা মায়াদুন ও তার মেয়ে নিশাঙ্গা মায়াদুন। ভয়াবহ এ হামলার কিছু সময় আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট দেন নিশাঙ্গা মায়াদুন। এর কিছুক্ষণ পরই ঘটে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড।

গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নিশাঙ্গা ও শান্তা মায়াদুন বোমা হামলায় নিহতের মধ্যে প্রথম ভুক্তভোগী। কলম্বোর পাঁচতারকা হোটেল শাংরি লা-তে ইস্টার সানডের ব্রেকফাস্টে গিয়েছিলেন তারা। পরিবারের সবাইকে নিয়ে সকালের নাশতার টেবিলে বসে সেলফি তোলেন নিশাঙ্গা। রোববার বেলা ১১টা ১৭ মিনিটে নিশাঙ্গা ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেখানে লেখা ছিল ‘ইস্টার ব্রেকফাস্ট উইথ ফ্যামিলি।’

ডেইলি মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করার কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের হোটেলে হামলা হয়। হামলায় মা-মেয়ে মারা যান। পরিবারের বাকি সদস্যদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনও জানা যায়নি।

সংবাদমাধ্যম সিএনএন নিশাঙ্গার ছবিটি প্রকাশ করে। ‘ইস্টার ব্রেকফাস্ট উইথ ফ্যামিলি’ শিরোনামে নিশাঙ্গা মায়াদুনের পোস্ট করা ছবিটি ইতিমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ব্যবহারকারীরা ছবিটি শেয়ার করে সমবেদনা জানাচ্ছেন। নিশাঙ্গার অমলিন হাসিটি এখন স্মৃতি হয়ে আছে। হাসিটি ছিল সবচেয়ে বেশি প্রাণোচ্ছল। কে জানত এটিই নিশাঙ্গার শেষ হাসি। হাসিটি এখনও সবার চোখে ভাসছে।

নিহত শান্তা মায়াদুন শ্রীলংকার একজন রন্ধনশিল্পী ছিলেন। টেলিভিশনে তার রান্নার অনুষ্ঠান প্রায়ই প্রচার হতো। বিভিন্ন রান্নায় বেশ পারদর্শী ছিলেন শান্তা মায়াদুনে। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভারতে রান্না বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। ওই বিষয়ে তার দুটি বইও আছে। সবচেয়ে বড় কথা- শ্রীলংকায় তার টিভি অনুষ্ঠান বেশ জনপ্রিয়। আর নিশাঙ্গা মায়াদুন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন।

প্রসঙ্গত রোববার কলম্বোর গির্জা ও পাঁচতারকা হোটেলসহ আটটি স্থানে সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ২৯০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫০০ জনের বেশি মানুষ। বোমা হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে কারা হামলা চালিয়েছে তা এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি দেশটির সরকার।

সকালে দ্বীপরাষ্ট্রটির রাজধানী কলম্বো এবং শহরতলির তিনটি গির্জা ও দেশের বড় তিনটি হোটেলে এ হামলা হয়। পরে আরও দুটি স্থানে হামলা হয়। গতকাল ছিল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় উৎসব ইস্টার সানডে। হামলার সময় তিন গির্জায় ইস্টার সানডের প্রার্থনা চলছিল।গৃহযুদ্ধের পর দেশটিতে এটিই সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা।

নিহত ২৯০ জনের মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ৮ বছর বয়সী নাতি জায়ান চৌধুরী। আহত শেখ সেলিমের জামাতা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স কলম্বোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর