বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বাগেরহাটের সন্তান শহীদ মনিরুজ্জামান বাদল। তিনি ছিলেন সৎ, ত্যাগী ও পরিশ্রমী ছাত্রনেতা। এই বাদলকে ১৯৯১ সালে টিএসসিতে শেখ হাসিনার মিটিং চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গুলি করে হত্যা করা হয়।
বাদল হত্যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রলীগে প্রকৃত রাজনৈতিক কর্মীদের বদলে সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বাড়ানোর জন্যে। তাছাড়া সরকারি মদত ছিল ওই সব হত্যাকারীদের পেছনে। সেদিন আওয়ামী লীগের দলীয় তদন্তে তৎকালীন যুবলীগ নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু চিহ্নিত হন বাদল হত্যার মূল হোতা হিসেবে।
শেখ হাসিনা সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেন বাদল হত্যাকারীকে তিনি তার দলে রাখবেন না। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র এতই গণতান্ত্রিক যে এখানে এককভাবে কেউ কাউকে দল থেকে বহিষ্কার করতে পারেন না। দলের সর্বোচ্চ বডি অর্থাৎ ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং ডাকতে হয়।
সেদিন শেখ হাসিনার বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবনে অর্থাৎ ২৯ মিন্টো রোডে এই ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং ডাকা হয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের মেম্বার একমাত্র ড. কামাল হোসেন তখন বাদল হত্যাকারীর পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।
তিনি রীতিমতো গালিগালাজ শুরু করে। ড. কামালের সে বক্তব্য খণ্ডন করে মতিয়া চৌধুরী সন্ত্রাসের বিপক্ষে এবং শেখ হাসিনার অবস্থানের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন। মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্যের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়ে- ড. কামাল শুধু উত্তেজিত হননি, ইংরেজি স্লাংও ব্যবহার করেন (ড. কামাল কী পরিমাণে স্লাং বলতে অভ্যস্ত তার উদাহরণ সম্প্রতি তিনি সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেলকে ‘বাস্টার্ড’ বলেন)।
তার স্লাং ব্যবহার শুনে অতিমাত্রায় ভদ্রলোক প্রয়াত আব্দুল জলিল, তৎকালীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক (পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক) যে বক্তব্য রাখেন তা ভদ্রতার একটি ইতিহাস। তিনি কামাল হোসেনকে ইংরেজি স্লাং বলতে নিষেধ করেন।
তাকে স্মরণ করিয়ে দেন, তিনি আওয়ামী লীগের মতো দলের ওয়ার্কিং কমিটিতে বক্তব্য রাখছেন। সেদিন ড. কামাল হোসেন ছাড়া বাদবাকি সকলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে বাদল হত্যাকারী হিসেবে অভিযুক্ত মোস্তফা মহসিন মন্টুকে আওয়ামী লীগে থেকে বহিষ্কার করা হয়।
সেখানে মন্টুর পক্ষে ছিলেন ড: কামাল হোসেন এবং তোফায়েল আহমেদসহ চারজন। মন্টুকে বহিষ্কারাদেশের বিপক্ষে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন তারা। মোস্তফা মহসিন মন্টুকে যখন প্রথমে সাসপেন্ড করা হয়, তখন তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশের সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রেসিডেয়াম সদস্য জোহরা তাজউদ্দীন। সেখানে তিনি বলেন, মন্টুকে অরাজনৈতিক-ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।মোস্তাফা মহসিন মন্টুকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের কিছুদিন পরেই ড. কামাল হোসেনও আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে আসেন। ড: কামাল হোসেন যখন গণফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন সে সময় মোস্তফা মহসিন মন্টুও সাথে ছিলেন।
বার্তাবাজার/কেএ