গরুর সাথে খাওয়া দাওয়া, গরুর সাথেই ঘুম

হাটের এক পাশে গ্যাসের চুলায় রান্না বসানো হয়েছে। এক চুলায় রান্না হচ্ছে আলু দিয়ে মুরগির মাংস, অন্য চুলায় ভাত। একটু ভেতরে দেখা যায় হাটের ভেতরেই দুপুরের খাওয়া সেরে নিচ্ছেন একদল গরুর বেপারী। পাশেই দেখা যায় গোছানো বিছানাপত্র। দিনের বেলা ও বৃষ্টি নামার কারণে বিছানা গোছানো। রাত বেশি হলে গরুর পাশেই বিছানা পেতে শুয়ে পড়েন তারা। বলা চলে গরুর সাথে খাওয়া গরুর সাথে ঘুমানো।

নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন গরুর হাটের দৃশ্য এটা । এ দৃশ্য দেখা যাবে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত এমনটা জানালেন লিংক রোডের পাশে সাইনবোর্ড এলাকার গরুর হাটের বেপারী তসলিম মিয়া। ফরিদপুরের মধুখালি থেকে তিনি গরু নিয়ে এসেছেন বিক্রি করার জন্য। বললেন, প্রতি কোরবানীর সময় তিনিও তার লোকজন গরু নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাটে আসেন। সদর উপজেলায় বসেছে ১৭টি বৈধ অস্থায়ী পশুর হাট।

গত সোমবার হাটগুলোর ইজারা সম্পন্ন হওয়ার পর থেকেই বেপারীরা গরু নিয়ে হাটে আসতে শুরু করেন বেপারীরা। আসার পর থেকে হাটের মধ্যেই থাকা, খাওয়া এমনকি রাতের ঘুমানের ব্যবস্থাও করেছেন। গ্রাম থেকে নিয়ে আসা গরুর সাথেই রাত্রিযাপন করছেন তারা। সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়নের বাদশা মিয়ার হাটে দেখা যায়, বেলা ও বৃষ্টি নামার কারণে বিছানা গোটানো। রাত বেশি হলে গরুর পাশেই বিছানা পেতে শুয়ে পড়েন তারা। এই হাটে দুই শতাধিক গরু নিয়ে সিরাজগঞ্জের শাহ্জাদপুর থেকে এসেছেন সানোয়ার হোসেন, মাবুদ আলী, আব্দুর রহমানের মতো ২২ জন বেপারী। এদের মধ্যে সানোয়ার হোসেন নিজেই গরু এনেছেন ৪২টি।

সানোয়ার হোসেন বলেন, ১৭ বছর ধরে আমি গরুর বেপারী করি। নারায়ণগঞ্জের হাটেই আসি প্রতিবার। এবার ৪২টা গরু নিয়ে এসেছি। থাকার জায়গা বাইরে করা যায় কিন্তু এতোগুলো গরু তো আর রেখে বাইরে থাকা যায় না। হঠাৎ গরুর কিছু হয়ে গেলে সাথে সাথেই ব্যবস্থা নিতে হয়। তাই খাওয়া-ধাওয়া-ঘুম সবই এই হাটেই করি।

গত সোমবার কুষ্টিয়া থেকে ৪টি গরু নিয়ে আসা আব্দুল করিম বলেন, বৃষ্টির কারণে নিচটা ভেজা তাই একটু শুইতে ঝামেলা হয়। কিন্তু দুয়েকটা দিনেরই তো ব্যাপার। গরু বিক্রি হলেই চলে যাবো। অনেকেই আমাদের মতো থাকছেন। তেমন একটা সমস্যা হয় না। পার্শ্ববর্তী হোটেলগুলো থেকে খাবার কিনে খাওয়ার পাশাপাশি নিজেরা রান্না করেও খাচ্ছেন বলে জানিয়ে আরেক বেপারী আব্দুর রহমান বলেন, রান্নার সব জিনিসপত্র নিয়ে আসছি। আসার সময় চামচটা হারিয়ে ফেলছি তাই ৫০ টাকা দিয়ে (চামচ দেখিয়ে) এই চামচটা কিনে আনছি তিনি আরো বলেন, হাটে ভালো জায়গা পাওয়ার জন্য একটু আগেভাগেই চলে আসি। গরু বিক্রি শেষ করতে পারলেই চলে যাই। এতোদিন ধরে পালা গরুর সাথে শেষ সময় কাটানোর লোভ সামলাতে পারি না বলে রাতে এখানেই বিছনা পেতে শুয়ে পড়ি।

এদিকে গোগনগর এলাকার বাদশা মিয়ার হাটের ইজারাদার মোসলেহউদ্দিন বলেন, হাটে বেপারীদের জন্য পর্যাপ্ত সুব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাদের রান্নার জন্য গ্যাসের ব্যবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থাও করা রয়েছে। বৃষ্টির কারণে কিছুটা ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে তবে তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।

বার্তাবাজার/এসআর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর