গভীর রাতে বেসরকারি ক্লিনিকে দুর্বৃত্তদের তাণ্ডব

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরে গভীর রাতে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তাণ্ডব চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে বুধবার সকাল ৭টা পর্যন্ত বুলডোজার দিয়ে জেলা সদর হাসপাতাল সড়কের মডার্ন এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের সীমানা প্রাচীর, রোগীদের প্রতিক্ষালয়সহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভাঙচুর করা হয়।

ক্লিনিকের জায়গাটি সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. হারুন অর রশীদের মালিকানাধীন। এ ঘটনার পর থেকে ক্লিনিকটিতে রোগীদের সেবা প্রদান বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শহরের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা সদর হাসপাতালের প্রধান ফটক থেকে প্রায় ৩০-৪০ ফুট দূরত্বে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদের বাড়ি।

এই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মডার্ন এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত বুলডোজার নিয়ে ওই ক্লিনিকে ভাঙচুর চালায়। এ সময় তারা ক্লিনিকের সীমানা প্রচীর, রোগীদের প্রতিক্ষালয়সহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভাঙচুর ও লোটপাট করে। পাশাপাশি ক্লিনিকের ভেতরের গাছও করাত দিয়ে কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। বুধবার সকাল সাতটা পর্যন্ত এই তাণ্ডব চালানো হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও মডার্ন এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের এক্স-রে টেকনিশিয়ান শফিক মিয়া বলেন, রাত দুইটা থেকে আড়াইটার দিকে প্রায় শতাধিক লোক বুলডোজার নিয়ে ভাঙচুর শুরু করে। তাদের বাধা দিতে গেলে পৌরসভা থেকে এসেছেন বলে জানান।

মডার্ন এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের পরিচালক আজিজুল হক জানান, রাতের আঁধারে একদল দুর্বৃত্ত এসে ভাঙচুর চালিয়েছে। ক্লিনিকের দুটি ফটক, একটি জেনারেটর, একটি আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন ও একটি এসি ট্রাকে করে নিয়ে গেছে তারা। এছাড়া ক্লিনিকের তিনটি জেনারেটর, সাতটি এসি, একটি আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন ও পাঁচটি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেছে।

সূত্রে জানা গেছে, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. জাকারিয়া ও ডা. মনির হোসেন, শহর যুবলীগের আহ্বায়ক আমজাদ হোসেন রনি, শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম, ব্যবসায়ী ওবায়দুল হকসহ বেশ কয়েকজন মিলে মডার্ন এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের পশ্চিম দিকে নতুন আরেকটি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য জায়গা কিনেছেন।

সেখানে মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। মূলত ওই হাসপাতালের রাস্তা তৈরির জন্য মডার্ন এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের সীমানা প্রচীরসহ ভেতরে তাণ্ডব চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ৩ জুলাই ডা. জাকারিয়া পৌরসভা মেয়রের কাছে সদর হাসপাতালের রোডে প্রস্তাবিত মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের দক্ষিণপাশে পৌরসভার পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি দখলকৃত রাস্তাটি (মডার্ন এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিক সীমানা প্রাচীরের দক্ষিণে পায়ে হাঁটার রাস্তা) সর্বসাধারণ ও সেবামূলক কাজে ব্যবহার করার জন্য দখলমুক্ত করার আবেদন করেন। জাকারিয়া ওই মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

তবে এ ব্যাপারে ডা. মো. জাকারিয়া দেশের বাইরে থাকায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ক্লিনিকের জায়গার মালিক হারুন অর রশীদও দেশের বাইরে অবস্থান করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির জানান, আমাদের কোনো লোক বুলডোজার নিয়ে যায়নি। আমাদের বুলডোজার নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। ডা. জাকারিয়ার আবেদনটি পৌরসভার প্রকৌশল শাখায় পড়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন জানান, ভাঙচুরের ঘটনাটি শুনে ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বার্তা বাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর