কুমিল্লায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া ভূয়া আইনজীবীসহ আটক ২

কুমিল্লায় প্রায় ৫০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়া ভূয়া আইনজীবী এবং সহযোগী তার শ্যালককে আটক করেছে র‌্যাব-১১।

রবিবার (২৬ মার্চ) রাতে জেলার কোতয়ালী মডেল থানার ধর্মসাগর এলাকা হতে প্রতারক মো. এহতেশামুল হক ওরফে এ্যাডভোকেট নোমান (৩৪) এবং তার শ্যালক জাহিদ হাসান ভূইয়াকে (২১) আটক করা হয়।

আটককৃত মো. এহতেশামুল হক কোতয়ালী মডেল থানার ঝাউতলা এলাকার মোঃ শামসুল হকের ছেলে এবং জাহিদ হাসান ভূইয়া (২১) বুড়িচং থানার বাহেরচর এলাকার মো. মহসীন ভূইয়ার ছেলে।

এসময় তাদের নিকট হতে বিপুল পরিমাণ ভুয়া ভিজিটিং কার্ড, বার কাউন্সিল এমসিকিউ পরীক্ষার উত্তরপত্র, আইন সম্পর্কিত প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র, ভুয়া আইডি কার্ড, ভুয়া সার্টিফিকেট, হলফনামা, ১ টি এটিএম কার্ড, ১ টি সিটি ব্যাংকের চেকবই, স্ট্যাম্প, কথোপকথনের স্ক্রীনশট, ২ টি পেনড্রাইভ, ২ টি আইনজীবী সম্বলিত মনোগ্রাম, ১ টি কম্পিউটার ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি, ৫ টি মোবাইল ও নগদ ১৮,০০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-১১,সিপিসি-২ কুমিল্লার উপপরিচালক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।

র‌্যাব জানায়, প্রতারক মো. এহতেশামুল হক নিজের নামে একটি ভুয়া এ্যাডভোকেট কার্ড ও মানবাধিকার কার্ড তৈরী করে ভিকটিম মো. রেজাউল করিম খানকে (৩৩) দেখিয়ে তার বিশ্বস্ততা অর্জন করে ফেলে ও নিজেকে আসল আইনজীবী বলে তার কাছে পরিচয় দেয়। নোমান ভিকটিমকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষার এমসিকিউ পর্বে পাশ করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। ভিকটিম পরীক্ষায় পাশ করার আশায় নিজে ও অন্যান্য শিক্ষানবিশ আইনজীবী মিলে সর্বমোট ৬ লক্ষ ৪০হাজার টাকা প্রতারক নোমানকে প্রদান করে।

এমসিকিউ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে দুইজন নিজের যোগ্যতায় পাশ করে। কিন্তু নোমান বিষয়টি তার নিজের কৃতিত্বের মাধ্যমে সম্পাদন করেছে বলে দাবি করে। পরে বিষয়টি অন্যান্য শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা বিষয়টি জানতে পারলে তাদের কাছেও বিষয়টি আসল বলে মনে হয় ও তারাও টাকা দেওয়ার জন্য রাজি হয়। পরবর্তীতে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে ভুক্তভোগীদেরকে পাশ করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতারক নোমান ভিকটিম রেজাউল ও অন্যান্য শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের নিকট হতে আরো ১৫লাখ ৫০হাজার টাকা দাবি করলে ভুক্তভোগীরা পাশের আশায় টাকা প্রদান করে এবং রেজাউল তা প্রতারক নোমানকে প্রদান করে। টাকা প্রদানকৃত মোট ১৭ জন শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের মধ্যে মাত্র একজন পাশ করলে ভিকটিমদের মাঝে সন্দেহ হয়। তখন তারা প্রতারক নোমানকে বিষয়টি অবগত করলে প্রতারক নোমান জানায় ১৫/২০ দিন পর প্রকাশিত পেন্ডিং ফলাফলে তাদের নাম আসবে ও তারা সবাই কৃতকার্য হবে। পেন্ডিং ফলাফলে কৃতকার্য হওয়ার আশায় নোমান ভিকটিমদের নিকট হতে আরো ২২ লক্ষ ১০হাজার টাকা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে পেন্ডিং ফলাফলে কেউই কৃতকার্য না হলে ভিকটিমরা বুঝতে পারে তারা প্রতারণার স্বীকার হয়েছে। এমতাবস্থায়, শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা ব্যাংক হতে লোন গ্রহণ ও ঋণের মাধ্যমে সংগ্রহকৃত টাকা প্রদানের ফলে পরিবার, সমাজ হতে হতাশাগ্রস্থ ও দুর্দশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং কোন দিশা না পেয়ে গত ৩ মার্চ র‌্যাব-১১, কুমিল্লা বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১১, সিপিসি-২ তাদের দুইজনকে আটক করে।

র‌্যাব আরও জানায়, এ বিষয়ে গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে জেলার কোতয়ালী মডেল থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর