দেবীদ্বারে আ.লীগের তিনটি পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, সংঘাতের আশঙ্কা

সভা-সমাবেশের কোনো বক্তব্যই মাটিতে পড়তে দিচ্ছেন না দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের স্থগিত হওয়া কমিটির পক্ষের বিপক্ষের নেতারা। সমানে চলছে কথাযুদ্ধ। পাশাপাশি জাতীয় দিবসগুলো উদযাপনসহ ও রাজপথেও মুখর তারা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ৮ মাস আগেই মাঠ দখলের মহড়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এক পক্ষ কর্মসূচির ডাক দিলে অপর পক্ষগুলোও একই দিন পাল্টা হাজির হচ্ছে রাজপথে। এর মাধ্যমে মনোনয়ণ প্রত্যাশীরা চাচ্ছে রাজনীতির ময়দান নিজেদের অনুকূলে রাখতে।

তবে বিরোধী দলের সাধারণ মিছিল-সমাবেশের মতো অহিংস কর্মসূচির বিপরীতে ক্ষমতাসীন দল কয়েকটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ডাকায় ঘন ঘন চড়ছে উত্তেজনার পারদ। একই দলের তিন গ্রুপের রাজপথের মিছিল- সমাবেশ ঘিরে আতঙ্ক উত্তেজনাসহ যানজট আর ভোগান্তি মানুষের অসহনীয় ঠেকছে।

আগামীতেও যেকোন কর্মসূচিতে রাজপথের থাকার ঘোষণা এরই মধ্যে দিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগের বিবদমান এ তিনটি গ্রুপ। এ পটভূমিতে সামনে বড় ধরনের সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা প্রশ্ন তুলেছেন- তাহলে কী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত এভাবেই একই দিন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি চলতেই থাকবে? এর কী শেষ নেই?

তারা বলছেন, এটা ঠিক, তাদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে এখনো কোন বড় সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তারপরও অন্তত জাতীয় দিবস গুলোতে বিভক্ত হয়ে এ ধরনের কর্মসূচিতে যাওয়া ঠিক হচ্ছে না। এটা জনমনে যেমন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, তেমনি বিরোধী দলও তাদের কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে কথা বলাসহ অভিযোগ আনার সুযোগ পাচ্ছে। এটা দল ও গণতন্ত্রের জন্যও সুখকর না।

সবশেষে রোববার (২৬ মার্চ) স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেবীদ্বার উপজেলা জুড়ে এখানকার আওয়ামী লীগের তিনটি গ্রুপ বিভক্ত হয়ে আলাদা আলাদা কর্মসূচি ডেকেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লার দেবীদ্বারে পূর্বের ন্যায় পালিত জাতীয় দিবসগুলোর মতো ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসেও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে স্থগিত হওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কমিটির বিবদমান তিনটি পক্ষ।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাতে পৃথকভাবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক রোশন আলী মাস্টারের অনুসারী দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম সফি উদ্দিন শফি, কুমিল্লা- ৪ (দেবীদ্বার) আসনের আওয়ামী লীগের দলীয় সাংসদ রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম মুন্সীর অনুসারী একই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মোস্তফা কামাল চৌধুরী ও কুমিলা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেবীদ্বার
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ পৃথক কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

রোববার স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম সফি উদ্দিন শফি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক রোশন আলী মাস্টারের নিজ বাসভবন দেবীদ্বারের চান্দিনা সড়কের মোহনা আবাসিক এলাকার রোশন ভিলায় ও দেবীদ্বার পৌর মিলনায়তনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মোস্তফা কামাল চৌধুরী তাদের অনুসারী দলীয় নেতাকর্মীসহ সব স্তরের জনগণকে নিয়ে পৃথক এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি।

অপরদিকে, একই দিবসের আরো একটি আলাদা কর্মস‚চী ডাকেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, বিগত টানা ১৪ বছর ধরে আ’লীগ ক্ষমতায় থাকলেও নিজ দলের উদ্যোগে কোন অনুষ্ঠানই ঐকবদ্ধভাবে করতে পারেনি দলটি। জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো সবসময় প্রশাসনের অনুষ্ঠানের মধ্যে উপস্থিত হয়ে দায়সারাভাবে পালন করে আসলেও এবারই প্রথম আওয়ামী লীগ গত ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ও ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান নিজ দলীয় ব্যানারে আলাদা আলাদা পালন করেছে।

তবে গত ২১ ফেব্রুয়ারি সদ্য ঘোষিত আওয়ামী লীগ উপজেলা কমিটির পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে এমপি গ্রুপ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টারের গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ওই সময়
রোশন আলী মাস্টার সমর্থিত অন্তত ১০-১২জন আহত হয়।

স্থানীয় সাংসদ রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল চৌধুরী বলেন, ২৭ বছর পর সম্মেলনে ৬ সদস্যের নাম ঘোষণায় সম্মেলন শেষ হয়, পরবর্তীতে ৭১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা হলেও তা পারিবারিক ও ব্যক্তি সমর্থকদের নিয়ে গঠন করার অভিযোগে ওই কমিটি স্থগিত রয়েছে। তাই সভাপতি আমার সাথে পরামর্শ না করেই নিজের একক সিদ্ধান্তে গত ২১ ফেব্রুয়ারি, ঐতিহাসিক ৭ ও ১৭ মার্চসহ স্বাধীনতা দিবস পালনের ঘোষণা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। আমি পৌর মিলনায়তনে ২৬ মার্চের আলোচনার আয়োজন করেছি। জেলা উপজেলার সকল নেতা-কর্মীদের দাওয়াত করেছি। স্থানীয় এমপি, জেলার আ’লীগের সভাপতিসহ অনেক নেতাই থাকবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন।

কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক রোশন আলী মাষ্টার বলেন, সামনে নির্বাচন তাই দলীয় শৃঙ্খলা না মেনে নিজেরা এমপি হয়ে যাবেন মনে করে যার যার অবস্থানে বিভাজন তৈরী করে নিজের অবস্থান তুলে ধরতেই যে যার মতো করে
আলাদা আলাদা কর্মসূচি ডেকেছে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ২৬ বছর পর কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি গত ১৫ জানুয়ারীর অনুমোদিত হলেও তা ফেসবুকের মাধ্যমে জনসম্মুখে আসে গত ২৩ জানুয়ারি।

ফেসবুকের মাধ্যমে জনসম্মুখে প্রকাশ পাওয়া কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের ওই নতুন পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণার তিনদিন পর কমিটি গঠনে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ এনে গত ২৬ জানুয়ারি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রাজীব স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই কমিটি প্রথম স্থগিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমীন স্বাক্ষরিত আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে দ্বিতীয় দফায় ওই কমিটি স্থগিতসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকদের মধ্যে
মতবিরোধসহ দুই গ্রæপের মধ্যে বিরোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

এ বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা নেতা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনকি সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আমরা কমিটির বিষয়টির নিরসনে জন্য কুমিল্লা উত্তর জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ডেকেছিলাম। এর মধ্যে জেলার সাধারণ সম্পাদক বৈঠকে না আসতে পারায় আগামী ২৮ মার্চ এ বিষয়ে আবারো বৈঠক হবার কথা রয়েছে তখন সবকিছু জানতে পারবেন।

বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর