২০৭ কোটি টাকা আত্মসাতে মাসুম চৌধুরীর নাম

মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর স্থায়ী বাসিন্দা। চট্টগ্রাম শহরে নানা ক্ষেত্রে তার বিচরণ। নিজেকে পরিচয় দেন সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, কলামিস্ট ও রাজনীতিক হিসেবে।

এ মাসুম চৌধুরীর বিরুদ্ধে উঠেছে শেয়ারবাজারের তহবিল থেকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ; ২০৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মাসুম চৌধুরীসহ ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অনেককে আসামি করে মামলা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (আইসিবি)।

১১ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন থানায় করা মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) খতিয়ে দেখছে।

মামলার নথিতে বলা হয়েছে, অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণামূলকভাবে টাকা আত্মসাৎ করার অপরাধ চিহ্নিত হয়েছে। আত্মসাৎকৃত ২০৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা উদ্ধার করতে এ মামলা করা হয়েছে।

অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ইউএফএস এর পরিচালক মাসুম চৌধুরীর বাইরে মামলার অন্য আসামিরা হলেন- অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ইউএফএস, ইউএফএসের চেয়ারম্যান সৈয়দ আলমগীর ফারুখ চৌধুরী, কোম্পানির এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীর, পরিচালক ইসরাত আলমগীর, আলিয়া হক আলমগীর, মাহিদ হক, মোহাম্মদ জাকির হোসেন, মোসাম্মত উম্মে ইসলাম সোহানা, সৈয়দা শেহরীন হোসেন, তারিক মাসুদ খান, সৈয়দা মেহরীন হুসেইনসহ অজ্ঞাতনামা অনেকে।

২০১৮ সাল থেকে তহবিল সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির তদন্তে উঠে আসে। এই জালিয়াতির ক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রতিবেদন জালিয়াতি এবং ভুয়া এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিড রেট) দেখিয়ে বিএসইসিকে অন্ধকারে রাখা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ৪ বছর নিষ্ক্রিয় ছিল ফান্ডের ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান (গ্যারান্টি দেয়া প্রতিষ্ঠান) আইসিবি। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি এ খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

জানা যায়, মাসুম চৌধুরী অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ইউএফএস’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বোর্ডের সবাই মিলে ২০৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। আর এই কারণেই ১১ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলাটি করে আইসিবি।

আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ইউনিভার্সেল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে আইসিবির পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে।’

এদিকে মাসুম চৌধুরীর বিরুদ্ধে আরও নানা অভিযোগ উঠেছে। তার প্রবাসী ভাই মামুন চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, মাসুম চৌধুরীর অপকর্মের শেষ নেই। দাখিল পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ে বহিষ্কার হন তিনি। অথচ তিনি নিজেকে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী, অধ্যাপক বলে পরিচয় দেন। সবই ভুয়া। ভুয়া কোম্পানি খুলে মানুষের টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন মাসুম চৌধুরী। এলিট ল্যান্ড লিমিটেড নামের একটি ভুয়া কোম্পানির নামে প্রতারণায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। আনোয়ার নামের এক প্রবাসীর করা খুলশী থানার মামলায় মাসুমের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। মামলাটি এখনো হাইকোর্টে চলমান আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাসুমের প্রতারণা থেকে পরিবারের সদস্যরাও বাদ পরেননি। ২০১৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ওপর হামলা করেন তিনি। মুমূর্ষু অবস্থায় আমাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। এ ঘটনায় হাটহাজারী থানায় মাসুম চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে আমি মামলা করি। কিন্তু সে মামলা থেকে অজ্ঞাত কারণে মাসুম চৌধুরীর নাম বাদ দেওয়া হয়। এছাড়া আমার অন্য চার ভাই-বোন এই মামলার সাক্ষী হওয়ায় তাদেরকে গ্রামের পৈত্রিক ভিটাবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে হত্যার হুমকি দিয়েছেন তিনি।’

মামুন চৌধুরী বলেন, ‘এতো কিছুর পরও ধরাছোঁয়ার বাইরে মাসুম চৌধুরী। তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মাসুম চৌধুরীর ব্যবহৃত ফোনে বারবার যোগাযোগ করে সম্ভব না হলে তার হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে তার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইসিবির মামলা হওয়ার পর থেকে গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন মাসুম চৌধুরী। তবে গত ১৯ মার্চ নিজের ফেসবুক আইডিতে মাসুম চৌধুরী লিখেছেন, ‘চুপ থাকা মানে দুর্বলতা নয়। সময় সুযোগে সব জবাব দেওয়া হবে।’

বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর