সীমান্ত সড়কে বদলে যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের দৃশ্যপট

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছায় পার্বত্য চট্টগ্রামে নবযুগের সূচনা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সড়ক যোগাযোগে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে দৃশ্যপট বদলে দিতে বর্তমান সরকার ২০১৯ সাল থেকে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করে।

সীমান্ত সড়ক ঘিরে নতুন স্বপ্নে বিভোর পাহাড়ের মানুষ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, তথ্য প্রযুক্তির, পর্যটন শিল্পের প্রসার এবং জীবনমানের ব্যাপক পরিবর্তনে সীমান্ত সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানান স্থানীয়রা।

তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলায় সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কারণে পাহাড়ি জনপদগুলোতে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। সড়ক নির্মাণের কারণে ভারত- বাংলাদেশের যোগাযোগের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যর প্রসার ঘটবে তেমনি যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পর্যটন শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে এমনটাই মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনস্থ ১৬, ২০ এবং এডহক ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছেন। সীমান্ত সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১০৩৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে একনেকে ৩১৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব গৃহীত হয়।

প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ের কাজের মধ্যে ৯৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন। এ বছরে প্রকল্পটির আরো ১৩২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। যা চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শেষ হবে।

অবশিষ্ট ৯০ কিলোমিটার কাজ ২০২৪ সালের জুন মাসে সম্পন্ন করা হবে বলে জানানো হয়। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলতে প্রধানমন্ত্রী এ সীমান্ত সড়ক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন।

রাজস্থলীর মিতিঙ্গাছড়ি এলাকার বাসিন্দা সুমন চাকমা জানান, সীমান্ত সড়ক হওয়ার আগে কেউ অসুস্থ হলে রোগীকে এখান থেকে হাসপাতালে নিতে খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিলো। বর্তমানে দুই ঘণ্টার মধ্যে রাজস্থলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছানো যায়।

রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউপি সদস্য জয়নুল তালুকদার জানান, রাজস্থলী উপজেলার মধ্যে সীমান্ত সড়ক হওয়ায় অত্যন্ত খুশি। এক সময় রাজস্থলী উপজেলা তেমন পরিচিত লাভ করেনি। এখন সীমান্ত সড়কের ফলে রাজস্থলীকে প্রত্যেকটা মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে।

ঘিলাছড়ি ইউপি সদস্য অজয় ত্রিপুরা জানান, মিতিঙ্গাছড়ি থেকে রাজস্থলী সদর প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরত্বে। সীমান্ত সড়ক হওয়ার ফলে সেই দূরত্বে অনেকাংশে কমে গেছে। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজস্থলী সদর থেকে শুরু করে চন্দ্রঘোনার লিচু বাগান ও চট্টগ্রাম পৌঁছানো খুবই সহজ হবে।

রাজস্থলীর ঘিলাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রবার্ট ত্রিপুরা জানান, সীমান্ত সড়ক হওায়ার ফলে দূর্গম এলাকার জনগণ বর্তমানে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিসপত্র রাজস্থলী সদরে এনে বিক্রয় করতে পারছে।

শুধু রাজস্থলী উপজেলা নয় জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি উপজেলার মানুষও এ সড়কের ফলে উপকৃত হবে। ভবিষ্যতে এই সড়ক পর্যটনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এদিকে, সীমান্ত সড়ক নির্মাণের ফলে স্থানীয়রা যেমন আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছেন তেমনি বর্তমান সরকারের এমন সাহসী উদ্যোগকে স্বাগত এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন।

২৬ ইঞ্জিনিয়ার্স কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক এইচএম মুহায়মিন বিল্লাহ চৌধুরী জানান, বাংলাদেশের সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত সড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রদান করেন। নিরলস প্রচেষ্টায় সীমান্ত সড়ক প্রকল্পটি সঠিক সময়ে গুণগত মান নিশ্চিত করে সম্পন্ন করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি প্রকল্পটি শেষ করা হবে।

তিনি আরো জানান, প্রকল্পটি অনেক দূর্গম এলাকাতে হওয়ায় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় কাজ করতে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখে হতে হয়। এছাড়াও এখানে নির্মাণ সামগ্রী সংকট রয়েছে এবং শ্রমিকেরও সংকট রয়েছে। এরপরও এ সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে সঠিক সময়ে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হবে।

সীমান্ত সড়কের পুরো কাজ বাস্তবায়ন হয়ে গেলে পার্বত্যাঞ্চল আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে। দেশের অর্থনীতিতে পার্বত্যাঞ্চল নতুন মাত্রায় যোগ করবে।

বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর