ঋণ পাওয়ার শর্ত বলে নয়, বরং অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে বেগবান ও টেকসই করার জন্য দরকারি সংস্কার কার্যক্রম হিসেবেই এগুলোকে দেখা উচিত। এসব সংস্কারের প্রস্তাব আমরাই আমাদের বাজেট ও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উপস্থাপন করেছি। বিশেষ করে কর কাঠামো এবং করনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। দুঃখের কথা যে আমাদের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত এখনো ৮ শতাংশের আশপাশে। আমাদের আশপাশের দেশের এই অনুপাত এর দ্বিগুণেরও বেশি।
প্রধানমন্ত্রী যেমনটি বলেছেন—জোরজবরদস্তি করে নয়, সংস্কার করে উপযুক্ত জনসম্পদ ব্যবহার করে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে এবং ‘ডিজিটাল আদায়’ পদ্ধতি চালু করে এই অনুপাত বাড়ানো সম্ভব। আইএমএফও একই সুরে কর-জিডিপি অনুপাত বছরে ০.৫ শতাংশ করে বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। একইভাবে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতে চলমান ভর্তুকি কাঠামো সংস্কারের কথা আইএমএফ বলেছে। এটি আমাদের মনের কথা। আমাদের বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখার দাওয়াই এটি, আইএমএফের প্রেসক্রিপশন নয়।
আর্থিক খাতকে আরো বাজারনির্ভর এবং এই খাতের শাসনপদ্ধতি উন্নয়নের যে শর্ত আইএমএফ দিয়েছে, তা-ও আমাদের ম্যাক্রো-অর্থনীতির সক্ষমতা বাড়াবে। ব্যাংকের পুঁজি পুনর্ভরণের মতো ‘বিলাসিতা’ করার সুযোগ আমাদের নেই। তাই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের টেকনিক্যাল জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ সংস্কারগুলো করা গেলে তা অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন কৌশলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে। আশার কথা, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ এবং উন্নয়ন অংশীজনদের মধ্যে এই প্রশ্নে এক ধরনের ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। এখন দেখার বিষয় কতটা সাফল্যের সঙ্গে আমরা এই ঐকমত্যের আলোকে সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে পারি।
লেখক : ড. আতিউর রহমান
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর