পরিবারের অভাব অনটনের কারণে স্কুলের গণ্ডি পেরুতে পারেননি। অষ্টম শ্রেণিতেই থেমে যায় তার পড়াশোনা। পড়াশোনার চাকা থেমে গেলে কাজ নেন ট্রাকের চাকা ঘুরানোর।আর এ দিয়ে চালাতেন নিজের সংসার।অভাবের কারণে লেখাপড়া করতে পারেননি ফারুক হোসেন, সে কথা আজও ভুলেননি।তাই দিনাজপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।
দরিদ্র-নিম্ন আয়ের ছেলেমেয়েদেন যাতে অর্থের অভাবে পড়ালেখা বন্ধ না হয় সেজন্য নিজের বেতনের একটা অংশ ব্যয় করেন শিক্ষা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধসহ সমাজসেবামূলক কাজে। আর এ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় পদক পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার কাশিমপুর মালিপুকুর গ্রামে বাড়ি ফারুক হোসেনের। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সহযোগী ট্রাকচালক।
দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে নিজের অপ্রতুল উপার্জনের মধ্যেও ২৫ শতাংশ খরচ করেন শিক্ষা উপরকরণ বিতরণ ও সমাজ সেবামূলক কাজে।
দরিদ্রতার কারণে বেশিদূর পাড়াশোনা করতে পারেননি। তাই অর্থের অভাবে আর যাতে কোনো শিশু ঝরে না পড়ে সেই লক্ষ্যেই তার এ পথ চলা।
নিজ গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে নিজ গিয়ে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের হাতে খাতা, কলমসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন। তার এ মহৎ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে চলতি বছর ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার হাতে তুলে দেন দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যোৎসাহী সমাজকর্মী পদক-২০১৮। তার এ সাফল্যে খুশি এলাকাবাসীসহ সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীরা।
এলাকাবাসী ও স্কুল শিক্ষার্থীরা জানান, তিনি নিজের পকেটের টাকা দিয়ে সবাইকে সাহায্য করেন। নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রম দিয়ে তিনি আরো এগিয়ে যাক-এটাই আমাদের দোয়া।
শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রেই থেমে নেই ফারুক। এলাকায় বাল্য বিবাহ রোধেও কাজ করছেন। পাশাপাশি তার বাড়ির উঠানে প্রতিদিন বসে বয়স্ক শিক্ষার আসর।
এক স্কুলছাত্রী জানায়, আমার মা আমার বিয়ে ঠিক করেন। ফারুক মামাই আমার বিয়ে আটকে দেন। এরপর থেকে তিনিই আমার পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছেন।
তার স্ত্রী সাবেরা খাতুনও চলছেন একই পথে। তারই সহযোগিতায় চলছে গ্রামে নিরক্ষর দূরীকরণের লক্ষ্যে বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম।
বার্তাবাজার/এএস