হুজুর, বাড়ি থেকে ১০ টাকা এনে দিচ্ছি, আমারে আর মাইরেন না’- এমন আকুতির পরেও ১০ বছর বয়সী মাদ্রাসাছাত্র রমজান মোল্যা রক্ষা পায়নি শিক্ষক হাফেজ ইমামুল হকের বেদম পিটুনির হাত থেকে। যশোরের অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নের খানজাহান আলী নূরানী হাফেজি মাদ্রাসায় ঘটে নির্মম এ নির্যাতনের ঘটনা।
আহত রমজান মোল্যা বাশুয়াড়ী গ্রামের ভ্যানচালক মো. আজানুর মোল্যার ছেলে। অসুস্থ রমজানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষক হাফেজ ইমামুল হক পলাতক রয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শিশু রমজান মোল্যা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমিসহ মাদ্রাসার ৩ জন ছাত্রকে ইমামুল হুজুর পাশের গ্রামে চাল ও টাকা কালেকশন করতে পাঠান। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কালেকশন করে ক্ষুধা লাগলে ১০ টাকার খাবার কিনে খাই। এজন্যে হুজুর আমাকে দাঁতন গাছ দিয়ে পেটাতে শুরু করেন। হুজুরের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে বলেছিলাম, ‘হুজুর, বাড়ি থেকে ১০ টাকা এনে দিচ্ছি, আমারে আর মাইরেন না’ তারপরও হুজুর মারতে থাকেন এবং বলেন তোর শরীরের যেখানে মারছি তা কাউকে দেখাতে তুই লজ্জা পাবি।
রমজানের পিতা ভ্যানচালক আজানুর মোল্যা বলেন, প্রতিমাসে ছেলের বেতন বাবদ ১২০ টাকা হাফেজ ইমামুল হুজুরের হাতে দিতে হয়। হুজুর বাড়ির সব কাজ মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে করান। আমার ছেলে হুজুরের কালেকশনের টাকা দিয়ে খাবার খাইছে। নিষ্ঠুরভাবে না মেরে আমাকে বললে আমি টাকা দিয়ে দিতাম। আমি নি-র্যাতনকারী হুজুরের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম মাহামুদুর রহমান রিজভী বলেন, মাদ্রাসাছাত্র রমজান মোল্যার কোমর ও নিতম্ব থেকে ২ পায়ে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। ওই স্থানে একাধিক ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে খানজাহান আলী নূরানী হাফেজী মাদ্রাসার অভিযুক্ত শিক্ষক মো. ইমামুল হকের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিক বার চেষ্টা করেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। মাদ্রাসায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, মাদ্রাসাছাত্রকে মারপিটের ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। শুনেছি ছাত্রটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বার্তাবাজার/কে.জে.পি