ধান ছেড়ে তামাক চাষে কৃষক

উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে রংপুরে বাড়ছে তামাকের চাষ। বগুড়া ও রাজশাহীতে সবজি আর নওগাঁয় আম চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। সিরাজগঞ্জের কৃষিজমি কেটে পুকুর তৈরি করছেন। মাছ চাষে আগ্রহ বাড়ছে সেখানকার মানুষের। গত চার–পাঁচ বছরে দেশের প্রধান ধান উৎপাদনকারী এলাকা উত্তরের জনপদে অনেকটা নীরবে এই পরিবর্তন ঘটে চলেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চলে ধারাবাহিকভাবে ধানের উৎপাদন কমছে। এ বছর কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এই প্রবণতা আরও বাড়তে পারে। নওগাঁয় গত চার বছরে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ও ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ কমেছে। জেলার ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে এ বছর আম চাষ হয়েছে। রংপুরে আম চাষের জমি ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর থেকে বেড়ে ৩ হাজার ১২৫ হেক্টর হয়েছে। বগুড়ায় পাঁচ বছরে ধানের জমি কমেছে ১ হাজার হেক্টর।

অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ জেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ১৮ হাজার ৮৪৬টি পুকুর রয়েছে। জেলায় রায়পুর ও তাড়াশ উপজেলায় পুকুরের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫টি পুকুর খনন করা হচ্ছে। জেলায় মাছের উৎপাদন ২০১১-১২ সালে ছিল ৫৩ হাজার ৯৮০ টন। চলতি বছর তা বেড়ে ৬৮হাজার ৪শ টন হবে বলে আশা করছেন মৎস্য কর্মকর্তারা।

উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁ। সেখান থেকে এখন কেউ বগুড়া হয়ে নাটোর, পাবনা দিয়ে সিরাজগঞ্জে যাওয়ার সময় ধানের জমিতে ভুট্টা, তিল ও সবজির চাষ দেখতে পাবেন। বিশেষ করে এসব এলাকায় আম, লিচু, ভুট্টা ও মাছের চাষ দ্রুত বাড়ছে। চলনবিলের নিচু জমিতে সারি সারি পুকুরে যে মাছ চাষ হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে তা তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীতে চলে আসছে। সবজি ও মাছচাষিরা ভালো দামও পাচ্ছেন। তাঁদের উৎপাদিত পণ্য প্রতি রাতে ট্রাকে করে চলে আসছে রাজধানীতে।

ফল ও সবজির উৎপাদন বৃদ্ধিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, এতে দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা মিটবে; বিশেষ করে ফলের প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপনে সরকার উৎসাহ দেবে। একই সঙ্গে এসব খাদ্যের গুণগত মান বাড়ানোর ব্যাপারেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, উদ্বৃত্ত চাল রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে ধান রাখার গুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উত্তরাঞ্চলের কৃষির পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করা সংস্থাগুলো বলছে, ধানের দাম না পাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য এই পরিবর্তন আরো বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়ে আসতে পারে। এর কারণ হিসেবে তাঁদের যুক্তি, সবজি ও ফল সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা দেশে গড়ে ওঠেনি। এ ছাড়া কোনো বছর উৎপাদন অনেক বেশি হলে কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে দামের বড় ধরনের পতন ঘটে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর